মার্কিন-ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা ‘রুশ অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিতে পারে’

ওয়াশিংটন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করতে প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। একইসঙ্গে তিনি ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি মস্কোর তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতিকে ধসিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার মতে, এই পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করবে।

রোববার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত এখন একটি প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে, যেখানে একপক্ষে রয়েছে ইউক্রেনের সামরিক শক্তির সহনশীলতা এবং অন্যপক্ষে রাশিয়ার অর্থনীতির টিকে থাকার ক্ষমতা।’

বেসেন্টের মতে, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং দ্বিতীয় দফার শুল্ক আরোপ করা হলে দেশটির অর্থনীতি পুরোপুরি ধসে পড়বে। তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে প্রস্তুত, তবে এজন্য আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদেরও আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে।’

মার্কিন প্রশাসনের এই সতর্কবার্তা এমন এক সময়ে এলো, যখন এক মাস আগেই রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এটি ছিল ওয়াশিংটনের আরোপিত অন্যতম কঠোর একটি শুল্ক।

বেসেন্টের এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া ২০২২ সালে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বিমান হামলাগুলোর একটি চালিয়েছে। এই হামলায় কিয়েভে একটি সরকারি ভবনে আগুন ধরে যায় এবং অন্তত চারজন নিহত হন।

ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন দূত কিথ কেলগ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘মস্কো রোববার চলমান যুদ্ধের সবচেয়ে বড় হামলাটি চালিয়েছে, যা ইউক্রেনের মন্ত্রিসভার কার্যালয়ে আঘাত হেনেছে। এই হামলা প্রমাণ করে রাশিয়া এখনো কূটনৈতিক সমাধান চায় না।’

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দেশগুলোর ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সব মিত্রদের প্রতি কৃতজ্ঞ, তবে কিছু দেশ এখনো রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনছে, যা একেবারেই অনুচিত। রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দেশগুলোর ওপর শুল্কারোপের ধারণাটি আমার মতে সঠিক।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কিছুদিন ধরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে চাপ বাড়ানোর কথা বললেও এখন পর্যন্ত তাকে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তিনি যুদ্ধ থামাতে দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের কথা বললেও বাস্তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। সম্প্রতি ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমবারের মতো আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করেন। তবে শান্তি নিয়ে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলা তা আবার ম্লান করে দিয়েছে।