সামাজিক মাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তে উত্তাল নেপাল, নিহত অন্তত ১০

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবারের এই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

‘জেন জি’ ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভে স্কুল শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার তরুণ সংসদ ভবনের সামনে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, কয়েকজন আন্দোলনকারী সংসদ চত্বরে প্রবেশের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে। কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের মুখপাত্র শেখর খানাল ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১০ জন বিক্ষোভকারী নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবার থেকে নেপালে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্স-সহ ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ ও বিভ্রান্ত। নিকটবর্তী সিভিল হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা রঞ্জনা নেপাল জানান, সংঘর্ষের পর আহতদের ভিড়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ পূর্ণ হয়ে যায়।

সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে এই নিষেধাজ্ঞা রাষ্ট্রপতি ভবন, উপ-রাষ্ট্রপতির বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংলগ্ন এলাকাতেও সম্প্রসারিত করা হয়।

বিক্ষোভের শুরুতে তরুণেরা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জাতীয় সংগীত গায় এবং পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। জনতা ‘দুর্নীতি বন্ধ করুন, সামাজিক মাধ্যম নয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা কাঁটাতারের বেড়া ঠেলে দাঙ্গা পুলিশকে পিছু হটতে বাধ্য করে এবং সংসদ ভবন ঘিরে ফেলে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্র যোজন রাজভান্ডারী (২৪) বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধের বিষয়টি আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে, কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি’। আরেক শিক্ষার্থী ইকশামা তুমরক (২০) এএফপিকে বলেন, তিনি সরকারের ‘স্বৈরাচারী মনোভাবের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা এটা সহ্য করেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের মাধ্যমেই এর শেষ হতে হবে’।

সরকার জানিয়েছে, নেপালে জনপ্রিয় প্রায় দুই ডজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দেশে তাদের সংস্থা নিবন্ধনের জন্য বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যেসব সংস্থা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে, গত সপ্তাহ থেকে তাদের পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে টিকটক, ভাইবারসহ আরও তিনটি প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন করায় সেগুলো কোনো বাধা ছাড়াই চলছে।