ক্যারিবিয়ানে উত্তেজনা: মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলা

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দেশের ক্যারিবীয় উপকূল এবং কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ২৫ হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় মাদুরো এ কথা জানান।

মাদুরো তার বার্তায় বলেন, ‘আমাদের বলিভারিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর ২৫ হাজার সদস্যকে কলম্বিয়া সীমান্ত এবং উত্তর-পূর্ব উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শান্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া।’

এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হলো, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বললেও মাদুরো এটিকে ‘ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের প্রস্তুতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

গত সপ্তাহে মার্কিন বাহিনী ক্যারিবিয়ান সাগরে একটি সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নৌকায় অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, নিহতরা ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত অপরাধী চক্র ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’র সদস্য ছিল। তবে এই দাবির সপক্ষে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও হুমকি দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার কোনো সামরিক বিমান আন্তর্জাতিক জলসীমায় মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজের কাছাকাছি উড়লে তা গুলি করে ভূপাতিত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি এই অঞ্চলে আটটি নৌজাহাজ মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত ডেস্ট্রয়ার, সাড়ে চার হাজার সেনাসদস্য বহনে সক্ষম জাহাজ এবং উচ্চপ্রযুক্তির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এটিকে বিগত কয়েক দশকে লাতিন আমেরিকায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বড় শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভেনেজুয়েলার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২৩ হাজার। মাদুরো জানিয়েছেন, এর সঙ্গে দুই লাখ ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী মিলিশিয়াও যুক্ত হয়েছে।

এদিকে, পেন্টাগনের প্রধান পিট হেগসেথ সোমবার পুয়ের্তো রিকোতে এক ঝটিকা সফরে যান। তার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল ড্যান কেইন। তাদের স্বাগত জানিয়ে পুয়ের্তো রিকোর গভর্নর জেনিফার গঞ্জালেজ-কোলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘মাদুরো পরিচালিত মাদক চক্র দমনে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে পুয়ের্তো রিকোর কৌশলগত গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ।’

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, মাদুরো একটি আন্তর্জাতিক কোকেন পাচার চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্য পুরস্কারের অর্থ দ্বিগুণ করে ৫০ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, বর্তমানে লাতিন আমেরিকায় আটটি মার্কিন নৌজাহাজ মাদকবিরোধী অভিযানে যুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে সাতটি ক্যারিবীয় সাগরে এবং একটি প্রশান্ত মহাসাগরে। এ ছাড়া পুয়ের্তো রিকোতে ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাঠানোর প্রক্রিয়াও চলছে।