তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার জেরে সৃষ্ট তীব্র গণবিক্ষোভ ও সহিংসতায় ১৯ জনের মৃত্যুর একদিন পর, মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। তার সহযোগী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দেশজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভকারীরা অনির্দিষ্টকালের কারফিউ উপেক্ষা করে এদিনও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সোমবার বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে। এতে ১৯ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ওলি সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

ভারত ও চীনের মধ্যে অবস্থিত হিমালয়কন্যা নেপালের জন্য এই অস্থিরতা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী ওলির পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে তার সহযোগী প্রকাশ সিলওয়াল রয়টার্সকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন’। এই পদক্ষেপের ফলে দেশটি নতুন করে এক গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ওলি সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি বৈঠকে বসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘সহিংসতা দেশের স্বার্থ রক্ষা করে না এবং যেকোনো সমস্যার সমাধানে আমাদের শান্তিপূর্ণ সংলাপের পথে যেতে হবে’।

কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। রাজধানী কাঠমান্ডুতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করলেও হাজার হাজার বিক্ষোভকারী তা উপেক্ষা করে সংসদ ভবনের সামনে এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়।

বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়, দাঙ্গা মোকাবিলার পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে এবং সরু গলিপথ দিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এসময় আকাশে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছিল এবং কিছু দর্শক মোবাইল ফোনে এই সংঘর্ষের দৃশ্য ধারণ করছিলেন।

একজন বিক্ষোভকারী রয়টার্সকে ফোনে জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানাতে ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী কয়েকটি শহর থেকে শত শত মানুষ কাঠমান্ডুর দিকে পদযাত্রা শুরু করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুতে কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কয়েকজন মন্ত্রীকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

রবিন শ্রেষ্ঠা নামের একজন বিক্ষোভকারী রয়টার্স টেলিভিশনকে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি… আমরা এই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত দেখতে চাই, যাতে প্রত্যেকে সহজে শিক্ষা, হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবা পেতে পারে… একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমাদের এই সংগ্রাম’।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা জ্ঞানেন্দ্র ভুল জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের লাগানো আগুনের ধোঁয়ার কারণে আশপাশের এলাকায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের দক্ষিণ দিক থেকে উড়োজাহাজ আগমন বন্ধ রাখা হয়েছে।

হিমালয়ের এই দেশটির অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়া এই বিক্ষোভের আয়োজকরা একে ‘জেন জি’র বিক্ষোভ’ বলে অভিহিত করেছেন। দুর্নীতি মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরিতে সরকারের দৃশ্যমান ব্যর্থতার বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক হতাশা থেকেই এই বিক্ষোভের জন্ম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।