নেপালে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি

নেপালের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে জেন-জি বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার জন্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে মনোনীত করা হয়েছে। টানা ছয় ঘণ্টার বৈঠকের পর বুধবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা এই সিদ্ধান্ত নেয়।

নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুশীলা কার্কি দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য সুপরিচিত। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং উচ্চপর্যায়ের একাধিক দুর্নীতি মামলার রায় দিয়ে দেশজুড়ে নজর কাড়েন। ২০১৭ সালে তাকে অভিশংসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও জনমত ও বিচার বিভাগীয় চাপের মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

গত সপ্তাহে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে কাঠমান্ডু, পোখারা, বুটওয়াল, বিরগঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। সরকার যদিও আয় ও সাইবার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়েছিল, তবে বিক্ষোভকারীরা একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের চেষ্টা হিসেবে দেখে।

অল্প সময়ের মধ্যেই এই আন্দোলন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে রূপ নেয়। সহিংসতায় অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ কয়েকটি শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

অস্থিরতার মধ্যে মঙ্গলবার প্রথমে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের প্রবল চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেলও পদত্যাগে বাধ্য হন। নেপালের সাংবিধানিক কাঠামো অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধানই সরকারের প্রধান হওয়ায় দেশটি এখন এক গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

আন্দোলনকারীরা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। তারা একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি হিসেবে চেয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে সুশীলা কার্কির মনোনয়ন সেই দাবি পূরণ করল। সাবেক প্রধান বিচারপতি কার্কি সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এই নেতারা মান্দাতা আমলের, তাদের কোনও দৃষ্টিভঙ্গি নেই। আমি আজ থেকে এই আন্দোলনকে সমর্থন করছি। কারণ এরা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে।’

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুশীলা কার্কির গ্রহণযোগ্যতা ও দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি তরুণদের মধ্যে আস্থা জাগিয়েছে। এখন আলোচনার মধ্য দিয়ে কীভাবে একটি স্থিতিশীল অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই সকলের নজরে থাকবে।