গাজা সিটিতে ইসরায়েলের তীব্র হামলা, গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে আবাসিক ভবন

গাজা শহর পুরোপুরি দখলের লক্ষ্যে ইসরায়েল তাদের স্থল অভিযান আরও জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে বুধবার শহরটির বিভিন্ন আবাসিক বহুতল ভবন এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তীব্র বোমা হামলা চালানো হয়েছে।

দিনভর বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে ১২ লাখের বেশি মানুষের এই শহর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল শহরের পশ্চিমাঞ্চল, যেখানে উত্তর ও পূর্ব গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া লাখ লাখ ফিলিস্তিনি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এদিন ইসরায়েলি হামলায় ‘তায়বা ২’ নামের সাততলা একটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। ভবনটিতে কয়েকশ বাসিন্দা বসবাস করতেন এবং এর পাশেই বাস্তুচ্যুতদের জন্য শিবির ছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই হামলায় দুজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন।

বাসিন্দাদের মতে, শুক্রবার থেকে এটি সপ্তম বহুতল ভবন, যা ইসরায়েলি হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো। তাদের অভিযোগ, শহরটিকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার জন্যই পরিকল্পিতভাবে একের পর এক অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধ্বংস করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রায়ি বেসামরিক নাগরিকদের আল-রশিদ সড়ক ব্যবহার করে অবিলম্বে খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলে আল-মাওয়াসি এলাকায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, শহরে অবস্থান করা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ এবং ‘হামাসকে নির্মূল করতে’ অভিযান আরও বিস্তৃত করা হবে।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য গাজা শহর খালি করা। সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, ক্রমাগত বোমাবর্ষণ ও বাস্তুচ্যুতির পরও শহরে এখনো ১২ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছেন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ১৭ লাখ ফিলিস্তিনিকে উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসি ও রাফাহতে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে হাসপাতাল, অবকাঠামো বা মৌলিক পরিষেবা বলতে কিছুই নেই।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। ফলে বাস্তুচ্যুত বেশিরভাগ পরিবারের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন ছাড়া আর কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই।

‘গিডিয়ন’স চারিওটস ২’ নামে ইসরায়েলের এই সর্বশেষ স্থল অভিযানটি গত ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। এর লক্ষ্য গাজা শহর পুরোপুরি দখল করা। তবে এই পরিকল্পনার কারণে ইসরায়েলি সেনা ও সেখানে বন্দিদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় ইসরায়েলের ভেতরেও এর সমালোচনা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের চালানো নৃশংস অভিযানে অন্তত ৬৪,৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সামরিক অভিযানে পুরো এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, গাজায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।