অবরোধের ডাকে উত্তাল ফ্রান্স, কঠোর অবস্থানে পুলিশ

ফ্রান্সে দেশ অচল করে দেওয়ার লক্ষ্যে আয়োজিত ‘ব্লক এভরিথিং’ বিক্ষোভে দেশজুড়ে ৬৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু প্যারিস থেকেই আটক করা হয় ২৮০ জনকে। ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম বিএফএম টিভি বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে।

প্যারিসের পুলিশ প্রধান লরেন্ট নুনেজ জানিয়েছেন, রাজধানীতে সংঘর্ষের পর নতুন করে আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বিক্ষোভ আন্দোলনটিকে ‘ব্যর্থ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘অনেক চেষ্টার’ পরও বড় ধরনের কোনো অবরোধ সফল হয়নি। তার তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত শুধু প্যারিসেই ২৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৬৪ জন পুলিশি হেফাজতে ছিলেন।

নুনেজ প্যারিসের রিং রোড অবরোধের প্রায় ১০টি ব্যর্থ চেষ্টা, গার দু নর্ড রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশের অসফল প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত বাধার কথা উল্লেখ করেন। সিনেট সভাপতি জেরার্ড লারশারও এই আন্দোলনকে ‘ব্যর্থতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এর মধ্যেও বৃহস্পতিবার নঁত এবং প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের চেষ্টার মতো কিছু ছোটখাটো বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল, যা দমনে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে।

পুলিশ প্রধান নুনেজ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী দিনগুলোতেও কর্তৃপক্ষ অবরোধ প্রতিরোধে ‘একই দৃঢ়তা ও সতর্কতা’ বজায় রাখবে। এরই মধ্যে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী নতুন বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। তবে প্যারিসে প্রস্তাবিত পদযাত্রার চূড়ান্ত পথ এখনো নিশ্চিত হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু হওয়া তৃণমূল পর্যায়ের ‘ব্লক এভরিথিং’ বিক্ষোভটি মূলত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইয়ুর জাতীয় বাজেট পরিকল্পনার বিরোধিতা করে শুরু হয়েছিল। ‘লে এসেনশিয়াল’ নামের একটি ছোট অনলাইন গোষ্ঠীর ডাকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে বামপন্থী দল ‘লা ফ্রান্স আনবাউড’ (এলএফআই) সমর্থন জানায়।

ফ্রান্সে বাইয়ুর বাজেট প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। তার সরকার গত জুলাই মাসে ২০২৬ সালের জন্য একটি বাজেট কাঠামো উপস্থাপন করে, যেখানে সরকারি ঋণ কমাতে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয়ের পরিকল্পনা ছিল। এই বাজেট নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় গত ডিসেম্বরে মিশেল বার্নিয়েরের সরকারের পতন ঘটে এবং সম্প্রতি আস্থা ভোটে হেরে যান বাইয়ু।

চলমান রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গত মঙ্গলবার সশস্ত্র বাহিনী মন্ত্রী সেবাস্তিয়েন লেকরনুকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাকে নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫.৮ শতাংশ, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ।