ইসরায়েলি কারাগারে মার্কিন কিশোরের স্বাস্থ্যহানি, ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ চায় পরিবার

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন কিশোরের স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি হওয়ায় তার পরিবার মুক্তির জন্য ওয়াশিংটনের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ১৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইব্রাহিম গত সাত মাস ধরে আটক আছেন এবং এ সময়ে তার সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম তীরে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে মোহাম্মদকে ইসরায়েলি বাহিনী আটক করে। অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর পাথর ছোড়ার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যদিও তার পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই গত মার্চে মোহাম্মদ তার ১৬তম জন্মদিন পালন করে।

মার্কিন ক্যাপিটলের বাইরে আয়োজিত এক প্রতিবাদে মোহাম্মদের চাচা জায়েদ কাদুর বলেন, ‘জেরুজালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ।’ তিনি জানান, তিন মাসেরও বেশি সময় আগে মোহাম্মদের খোসপাঁচড়া হলেও কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। তার শরীরের ওজন ৩০ পাউন্ডের বেশি কমে গেছে, যা তার মোট ওজনের এক-চতুর্থাংশের চেয়েও বেশি।

জায়েদ কাদুর বলেন, ‘তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমরা তাকে দেখিনি, তার কণ্ঠও শুনিনি। শেষবার যখন মোহাম্মদকে দেখেছিলাম, তখন ২৫ জন সশস্ত্র সৈন্য তার বাবা-মায়ের সামনে থেকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় তাকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাচ্ছিল।’

পরিবারের অভিযোগ, তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। জায়েদ বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের উপেক্ষা করেছে, ফোন ধরেনি এবং ইমেইলেরও কোনো জবাব দেয়নি।’

ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওর প্রতি বিশেষ ক্ষোভ প্রকাশ করে জায়েদ কাদুর বলেন, ‘তারা দেড় হাজার ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিককে ব্যক্তিগত বিমানে করে ফ্লোরিডায় ফিরিয়ে এনেছে। অথচ তিনি তার নিজের রাজ্যের একটি শিশুর বিষয়ে একটি ফোন বা ইমেইলেরও জবাব দেননি।’

মোহাম্মদের এই ঘটনা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) এবং জিউইশ ভয়েস ফর পিস অ্যাকশনসহ শতাধিক মানবাধিকার সংগঠন সিনেটর মার্কো রুবিওকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে মোহাম্মদকে ‘বিনা বিচারে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ এক মার্কিন শিশু’ হিসেবে বর্ণনা করে তার মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জায়েদ কাদুর তার ভাগ্নের এই পরিস্থিতিকে দখলদারত্বের অধীনে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বাস্তবতার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যে ফোনকলে সেখানে বিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়, সেই একই ফোনকলে একজন মার্কিন শিশুকে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’