গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বললেন মার্কিন সিনেটর

মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ইসরায়েলের গাজা অভিযানকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বুধবার নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক মতামত কলামে তিনি এই মন্তব্য করেন এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

‘এটি গণহত্যা’ শিরোনামের কলামে স্যান্ডার্স অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলি সরকার হামাসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার নামে ‘পুরো ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ’ শুরু করেছে। তিনি আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের তদন্তকারীদের ক্রমবর্ধমান তথ্য-প্রমাণকে তার এই অবস্থানের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

স্যান্ডার্স স্বীকার করেন যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। তবে তিনি যুক্তি দেন, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পরিধি, মাত্রা এবং সময়কাল অনেক আগেই আত্মরক্ষার সীমা অতিক্রম করেছে। তার মতে, ইসরায়েলের এই অভিযান গণহত্যা, অনাহার এবং ধ্বংসযজ্ঞের নীতিতে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্য পরিষ্কার। উপসংহারও অনিবার্য: ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে।’ স্যান্ডার্স আরও যোগ করেন, ‘আমি জানি অনেকে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু সত্য হলো, আপনি একে গণহত্যা, জাতিগত নিধন, ব্যাপক নৃশংসতা বা যুদ্ধাপরাধ যা-ই বলুন না কেন, সামনের পথটি পরিষ্কার।’

স্যান্ডার্স এই যুদ্ধে ক্রমাগত অস্ত্র বিক্রি ও কূটনৈতিক সমর্থনের মাধ্যমে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সমালোচনা করেন। তিনি ইসরায়েলের কাছে সব ধরনের আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রি অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান এবং ট্রাম্প প্রশাসন ও কংগ্রেসকে ফিলিস্তিনি জনগণের এই হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্ব বন্ধ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নেতানিয়াহুর গণহত্যাকারী সরকারকে কোটি কোটি ডলার এবং অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটিকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করার পর, আমাদের প্রভাবের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, জাতিসংঘের মাধ্যমে ব্যাপক মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব রাষ্ট্র দেওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপের দাবি জানাতে হবে।’

স্যান্ডার্স এই সংকটকে একটি বৃহত্তর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে স্থাপন করে সতর্ক করেন যে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতির অবক্ষয়, বিশেষ করে গণহত্যার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি যোগ করেন, ‘কোনো ভুল করবেন না। নেতানিয়াহু এবং তার সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের যদি জবাবদিহি না করা হয়, তবে অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসকেরাও একই কাজ করবে। ইতিহাস দাবি করে, বিশ্বকে এক কণ্ঠে বলতে হবে: যথেষ্ট হয়েছে। আর কোনো গণহত্যা নয়।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণে এই ভূখণ্ডটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং অনাহার ও রোগের বিস্তার ঘটেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।