ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে আমানত, কমছে নগদ টাকা

মাসের পর মাস ধীরগতির পর জুলাইয়ে আবারও ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই শেষে আমানতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশে, যা জুনে ছিল ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

২০২৫ সালের জুলাইয়ে মোট ব্যাংক আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সঞ্চয়পত্র ও সরকারি বন্ডে সুদের হার কমে যাওয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ আবারও ব্যাংকিং খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার আভাস জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের হার কমে যাওয়ায় কিছু অর্থ আবার ব্যাংকে জমা পড়ছে। একই সঙ্গে কিছু ব্যাংক তারল্য বাড়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংক একীভূত হওয়ার সময় কিছু মানুষ টাকা তুলে নেয়ায় আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল, বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে সেই সংকট অনেকটা কেটে গেছে, আমানত আবার বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ধারাবাহিক রেমিট্যান্স প্রবাহও অর্থের জোগান বাড়িয়েছে। “যখন মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা পায়, তখন তারা সঞ্চয়পত্রের বদলে ব্যাংকে টাকা রাখে। সেই আস্থা ধীরে ধীরে ফিরে আসছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, আস্থার পুনরুদ্ধার, সরকারি সংস্কার, সঞ্চয়পত্রে সুদ কমে যাওয়া এবং প্রতিযোগিতামূলক আমানত পণ্য আমানত প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অর্থনীতি কিছুটা আনুষ্ঠানিক খাতে ফিরেছে, যা ব্যাংকিং খাতের জন্য ইতিবাচক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকের বাইরে থাকা মুদ্রার পরিমাণও কমেছে। জুনে যেখানে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা, জুলাইয়ে তা নেমে আসে ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকায়, এক মাসে প্রায় ৯ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা কমেছে।

এক বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেহেতু আস্থা ফিরছে, তাই কিছু টাকা আবার ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে। তবে সব টাকা ব্যাংকে না গিয়ে অন্য খাতেও বিনিয়োগ হচ্ছে।