ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুতির ওপর নির্ভর করছে গাজায় ইসরায়েলি সেনার অগ্রগতি

গাজা শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্থল অভিযান বেশ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন একজন ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষক। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, এই অগ্রযাত্রার গতি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের এলাকা ছাড়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

আর্মি রেডিওর জন্য করা এক প্রতিবেদনে সামরিক বিশ্লেষক ডরন কাডোশ জানান, ১৬২তম এবং ৯৮তম ডিভিশন দুই দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করলেও তারা ‘অত্যন্ত ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, জ্যেষ্ঠ কমান্ডাররা বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি ‘অনুসন্ধানী পর্ব’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। এই পর্বে সেনারা নগরীর কেন্দ্রে সরাসরি ঝটিকা আক্রমণের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে। কাডোশের মতে, গাজা শহরের কেন্দ্রে থাকা হামাস যোদ্ধারা আপাতত সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পিছু হটেছে।

ওই বিশ্লেষক আরও যোগ করেন, বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা কত দ্রুত তাদের ঘরবাড়ি ছাড়ছে, তার ওপরই এই অভিযানের মাত্রা নির্ভর করছে। তিনি বলেন, ‘বাসিন্দা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া খুব ধীর হওয়ায়’ সেনাবাহিনী ৩৬তম ডিভিশনকে অভিযানে নামাতে কয়েক দিন দেরি করেছে। যদিও ডিভিশনটির অন্য দুটির সঙ্গেই অভিযানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, তবে ‘স্থানচ্যুতির গতি বাড়ায় আগামী দিনগুলোতে’ এটি অভিযানে যুক্ত হতে পারে।

প্রতিবেদনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কাঠামোর অভ্যন্তরীণ সমালোচনার বিষয়টিও উঠে এসেছে। জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড প্রথমে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র উপকূলীয় রশিদ সড়ক খোলা রেখেছিল, যা ব্যাপক যানজট সৃষ্টি করে এবং স্থানচ্যুতি প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। পরে যানজট কমাতে দ্বিতীয় পথ হিসেবে সালাহ আল-দিন সড়ক খুলে দেওয়া হয়।

কাডোশ দাবি করেন, গাজা শহরে থাকা হামাস যোদ্ধাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে দক্ষিণে ইসরায়েলের ঘোষিত ‘মানবিক এলাকায়’ চলে গেছে এবং অনেকে সেনাবাহিনীর আগমনের অপেক্ষায় ভূগর্ভে অবস্থান করছে। এদিকে, দ্য জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে ইসরায়েলি হামলা শুরুর আগে গাজা শহরের জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি। কিন্তু উঁচু আবাসিক ভবনগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪ লাখেরও বেশি মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।

মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহরে তাদের আক্রমণ আরও বিস্তৃত করে, যদিও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে কোনো পূর্ণমাত্রার অনুপ্রবেশ ঘটেনি। এর পরিবর্তে, ইসরায়েল গোলাবর্ষণ, বিমান হামলা এবং বিস্ফোরক-যুক্ত রোবট ব্যবহার করে বাড়িঘর ধ্বংসের মাত্রা বাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিরা এই কর্মকাণ্ডকে গণহারে স্থানচ্যুতির একটি ঘৃণ্য অভিযান হিসেবে বর্ণনা করছে।

এর আগে আগস্ট মাসে ইসরায়েলি সরকার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা উপত্যকা পুরোপুরি পুনর্দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করে, যা গাজা শহর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। গত ১১ আগস্ট ‘অপারেশন গিডিয়নস চারিওটস ২’-এর অধীনে পূর্বাঞ্চলীয় জায়তুন এলাকা থেকে এই হামলা শুরু হয়, যার মধ্যে ব্যাপক বোমাবর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ এবং জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজা উপত্যকায় তাদের আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে, যেখানে ৬৫,১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানকার মানুষকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন নিশ্চিত করেছে যে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে।