হাঙ্গেরিকে পাশ কাটাতে নতুন পথে হাঁটছে ইউরোপ?

ইউক্রেনকে যুদ্ধকালীন আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে নতুন একটি উপায় নিয়ে আলোচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ব্যবহার করে ‘প্রত্যাবাসন ঋণ’ চালুর এই প্রস্তাব মূলত হাঙ্গেরির সম্ভাব্য ভেটোকে পাশ কাটানোর একটি কৌশল। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউক্রেন এই ঋণ কেবল তখনই পরিশোধ করবে, যখন তারা রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ পাবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন গত সপ্তাহে এই ধারণাটি সামনে আনেন। তিনি জানান, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জব্দ করা নগদ অর্থকে ভিত্তি করে এই ঋণ দেওয়া যেতে পারে, তবে এক্ষেত্রে সম্পদ সরাসরি বাজেয়াপ্ত করা হবে না।

কর্মকর্তাদের মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সব সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনের প্রয়োজন হবে না। যদি হাঙ্গেরি এতে অংশ না নেয়, তবে ইচ্ছুক দেশগুলোকে নিয়ে একটি জোট গঠন করে এগোনো সম্ভব।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ‘আমরা নতুন ঋণ প্রস্তাবটি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছি। তবে ঋণের পরিমাণসহ অনেক বিষয় এখনও চূড়ান্ত হয়নি।'

বর্তমানে ইউরোপে রাশিয়ার প্রায় ২১০ বিলিয়ন ইউরো (২৫০ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের সম্পদ জব্দ রয়েছে, যার বেশিরভাগই নগদ অর্থে বেলজিয়ামের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউরোক্লিয়ারে জমা আছে। এরই মধ্যে এই সম্পদের সুদ ব্যবহার করে জি-৭ দেশগুলোর দেওয়া ৫০ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে নগদ হওয়ায় এসব সম্পদ থেকে সুদের আয় তুলনামূলকভাবে কম।

ইইউর নতুন পরিকল্পনায়, রাশিয়ার সম্পদগুলোকে ইউরোপীয় কমিশন কর্তৃক ইস্যু করা ‘জিরো-কুপন বন্ড’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। এই বন্ডের জামিনদার হবে ইইউর সব দেশ অথবা কেবল অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এতে রাজনৈতিক ঝুঁকি থাকলেও রাশিয়া ইউক্রেন থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ফলে এই সম্পদ ছাড়িয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

অর্থনৈতিকভাবে হাঙ্গেরির গুরুত্ব তুলনামূলক কম হওয়ায় তারা অংশ না নিলেও বাকি দেশগুলোর ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু দেশের ভেটো ব্যবহার করে ইইউকে জিম্মি করার চেষ্টা এড়াতে আন্তঃসরকারি চুক্তিই সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে’।

ইইউ কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ইউরোক্লিয়ার থেকে সম্পদ সরিয়ে দীর্ঘমেয়াদি খাতে বিনিয়োগ করা হলে আরও বেশি সুদ পাওয়া সম্ভব। এতে শুধু জি-৭ ঋণের সুদই পরিশোধ হবে না, বরং ভবিষ্যতের আয় দিয়ে ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা দেওয়াও সহজ হবে।