গাজায় জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে, নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি

হামাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যতক্ষণ পর্যন্ত গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখবেন, ততক্ষণ তারা সেখানে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবনের সুরক্ষা দেবে না। গোষ্ঠীটির দাবি, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা এবং জিম্মিদের হত্যা করা। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড এই সতর্কবার্তা দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আপনাদের বন্দিরা গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং নেতানিয়াহু যেহেতু তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই আমরা তাদের জীবনের সুরক্ষা দেবো না।’

ইসরায়েলিদের উদ্দেশে তারা আরও সতর্ক করে বলে, গাজায় সামরিক অভিযানের বিস্তার ঘটানোর অর্থ হলো, কোনো জিম্মিকে জীবিত বা মৃত—কোনোভাবেই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। তাদের পরিণতি হবে রন আরাদের মতো। উল্লেখ্য, রন আরদ নামের একজন ইসরায়েলি সৈন্য ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ লেবানন থেকে নিখোঁজ হন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাকে লেবাননের আমাল মুভমেন্ট আটক করে এবং পরে হিজবুল্লাহর কাছে হস্তান্তর করে। ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর তৎকালীন মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ আরাদের পরিণতি সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে জানান এবং এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি আরাদকে ‘মৃত এবং হারিয়ে গেছেন’ বলে বিশ্বাস করেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত ১১ আগস্ট গাজা শহরের দক্ষিণ-পূর্বের জাইতুন এলাকা থেকে ‘গিডিয়নের রথ ২’ নামে একটি অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন ব্যবহার করে ঘরবাড়ি ধ্বংস, গোলাবর্ষণ, নির্বিচারে গুলি এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ঘটানো হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ট্যাংকসহ ভারী সামরিক সরঞ্জাম উত্তর-পশ্চিম গাজা শহরের নতুন নতুন এলাকায় অগ্রসর হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা শত্রুপক্ষের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বলতে চাই, গাজা আপনাদের কাপুরুষ সেনাবাহিনীর জন্য সহজ শিকার হবে না। আমরা আপনাদের ভয় পাই না এবং আপনাদের সৈন্যদের জাহান্নামে পাঠাতে প্রস্তুত।’ হামাস একটি দীর্ঘস্থায়ী ও ক্ষয়িষ্ণু যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বলেছে, এর ফলে ইসরায়েলকে আরও বেশি হতাহতের শিকার হতে হবে এবং আরও জিম্মি আটক হবে।

ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ১১ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি রয়েছেন, যাদের অনেকেই নির্যাতন, অনাহার ও চিকিৎসায় অবহেলার শিকার হচ্ছেন এবং এর ফলে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং পুরো উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যা এখন দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি।