এইচ-১বি ভিসার ফি ২০ গুণ বাড়াল যুক্তরাষ্ট্র, প্রযুক্তি খাতে বড় ধাক্কা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এইচ-১বি ভিসা কর্মসূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি একটি নতুন ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন, যেখানে এই ভিসার আবেদন ফি ২০ গুণ বাড়িয়ে এক লাখ ডলার করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে প্রযুক্তি খাত তথা ভারতীয় কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘গোল্ড কার্ড’ নামে একটি নতুন ভিসা চালুর কথাও ঘোষণা করেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আগ্রহীরা ১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে দ্রুত অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ পাবেন। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ পরিবর্তনগুলো নিশ্চিত করবে যে কোম্পানিগুলো কেবল সবচেয়ে বিরল দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্যই ভিসার আবেদন করবে। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দুর্দান্ত ও চমৎকার কর্মীদের প্রয়োজন। আর এ সিদ্ধান্ত সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে’।

মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, আবেদনকারীদের এক লাখ ডলারের এই ফি প্রতি বছরই দিতে হবে। তিনি আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব বড় কোম্পানি ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন এই পরিকল্পনার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের উচ্চ ফি নির্ধারণের ফলে এইচ-১বি ভিসা ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে যাবে। ১৯৯০ সালে এই কর্মসূচি চালু হয়েছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও গণিতের মতো খাতে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর ঘাটতি পূরণের জন্য। সাধারণত স্নাতক বা তার চেয়ে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত এই ভিসা লটারির মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

এইচ-১বি ভিসার সমর্থকরা বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বের সেরা মেধাবীদের যুক্তরাষ্ট্রে এনে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় দেশকে এগিয়ে রাখা হয়। অন্যদিকে, সমালোচকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, অনেক কোম্পানি এই ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার করে কম মজুরিতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেয় এবং এতে শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, নতুন এই পরিবর্তনে প্রযুক্তি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চলতি বছরে অ্যামাজন সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১০ হাজারের বেশি এইচ-১বি ভিসা পেয়েছে। তালিকার পরবর্তী স্থানগুলোতে রয়েছে টাটা কনসালটেন্সি, মাইক্রোসফট, অ্যাপল ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান।

ভৌগোলিক বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা ব্যবহারকারী কর্মী ক্যালিফোর্নিয়ায় কর্মরত। তবে দেশের হিসেবে ভারতীয় নাগরিকরাই এই ভিসার সিংহভাগ পেয়ে থাকেন। গত বছর মোট এইচ-১বি ভিসার ৭১ শতাংশই পেয়েছেন ভারতীয়রা, যেখানে মাত্র ১১.৭ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চীন। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন সিদ্ধান্তে ভারতীয়রাই সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত এই ভিসার মেয়াদ তিন থেকে ছয় বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা অবলম্বন করছে। এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট যাচাই এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।