পারমাণবিক শক্তি পাকিস্তানের পাশে সৌদি আরব, নতুন চাপে ভারত

পাকিস্তান বা সৌদি আরবের ওপর যেকোনো একটি দেশের ওপর হামলা এখন থেকে উভয় দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। সম্প্রতি দেশ দুটির মধ্যে স্বাক্ষরিত এক ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই চুক্তি ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত সপ্তাহে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দশকের সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো। এখন থেকে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের স্থল, বিমান এবং নৌবাহিনী আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এর পাশাপাশি তারা গোয়েন্দা তথ্যও আদান-প্রদান করবে। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে পাকিস্তান এই চুক্তির মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলে সৌদি আরবের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে, যা গাজায় চলমান সংঘাত এবং পরিবর্তিত বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রিয়াদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি পাকিস্তানের জন্য ‘লটারি জেতার মতো।’ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তান এর মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে আরও বেশি আর্থিক সহায়তা পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতীতেও সৌদি আরব পাকিস্তানকে বিভিন্ন সময়ে তেল কেনার জন্য বিলম্বে অর্থ পরিশোধের সুবিধা, সহজ শর্তে ঋণ এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরাসরি ডলার জমা দিয়ে সহায়তা করেছে। সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানির মতে, সৌদি অর্থ ব্যবহার করে পাকিস্তান এখন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রশস্ত্র কিনতে সক্ষম হবে, যা তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

এই চুক্তির ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভারতকে এখন একাধিক বিষয় ভাবতে হবে। বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযানের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুক্তাদির খান মনে করেন, পাকিস্তানে হামলা হলে সৌদি আরব সরাসরি ইসলামাবাদকে সমর্থন দেবে কি না, তা এখন ভারতের জন্য একটি বড় বিবেচনার বিষয়। এছাড়া, সৌদি আরবে কর্মরত লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিকের স্বার্থের বিষয়টিও দিল্লিকে মাথায় রাখতে হবে।

এই চুক্তির মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনীতিতে পাকিস্তানের প্রভাব আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে অন্যান্য আরব দেশের যোগদানের সম্ভাবনাও রয়েছে এবং এর আওতায় পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতার সুবিধাও পাওয়া যাবে। তার এই বক্তব্যকে অন্য আরব দেশগুলোর প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করার আমন্ত্রণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আরব দেশগুলো অস্ত্রের জন্য অর্থ ব্যয় করলেও তাদের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা কম। এক্ষেত্রে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

সার্বিকভাবে, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই শক্তিশালী করবে না, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যকেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে। এর ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে তাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তা কৌশল নতুন করে সাজাতে হতে পারে।