১৯৬৭ সালের পর জাতিসংঘে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন সিরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্ট

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা। ১৯৬৭ সালের পর তিনিই প্রথম সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধান যিনি এই বিশ্বসভায় ভাষণ দেবেন। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ছয় দশকের বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটিয়ে সিরিয়া বিশ্বমঞ্চে ফিরছে।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শারা দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যেকোনো ধরনের বিলম্বের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের বাধা সিরীয় জনগণকে হত্যার ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে অংশ নেওয়ার শামিল হবে।

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই অধিবেশনে শারার ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

কেন এতদিন কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে ভাষণ দেননি?

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেননি। ওই যুদ্ধে সিরিয়া গোলান মালভূমি ইসরায়েলের কাছে হারায়। এরপর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নুরুদ্দিন আল-আতাসী সর্বশেষ জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর দামেস্ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। তাদের ধারণা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে, যার ফলে জাতিসংঘ নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। পরবর্তীতে আসাদ পরিবারের শাসনামলে প্রায় অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে এই বিচ্ছিন্নতা বজায় থাকে।

সাক্ষাৎকারে যা বললেন শারা

নিউইয়র্কে সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আহমেদ আল শারা বলেন, ‘আমি মনে করি, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব বা বাধা প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সিরিয়ার জনগণের হত্যায় আরেকবার সহযোগী হওয়া উচিত নয়। তারা যেন নিজেদের দেশ পুনর্গঠনে বাধা না পায়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, তারা সিরিয়ার জনগণের হত্যায় পুনরায় সহযোগী হবে।’

নিজের সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে শারা বলেন, তার সরকার জনগণকে পূর্ববর্তী ‘অপরাধী শাসনের’ দমন-পীড়ন থেকে মুক্ত করেছে এবং উদ্বাস্তু ও বাস্তুচ্যুত মানুষের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সিরিয়া দায়েশের (আইএস) মুখোমুখি হয়েছে, ইরানি মিলিশিয়া ও হিজবুল্লাহকে বহিষ্কার করেছে এবং রাসায়নিক অস্ত্রের ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই ভূমিকাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পালন করা উচিত ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একজন বন্দীকেও মুক্ত করতে পারেনি, এমনকি একটি অবরুদ্ধ শহরের অভুক্ত মানুষদের কাছে খাদ্য পৌঁছাতেও ব্যর্থ হয়েছে।’

সাক্ষাৎকারে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে ‘দ্রুত, সাহসী ও ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেন। শারা বলেন, সিরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে এবং তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাৎ করে ‘সম্পর্ককে ভালো ও সরাসরি উপায়ে পুনরুদ্ধার’ করতে আগ্রহী।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের ঝটিকা অভিযানের মুখে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে গেলে ১৯৬৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বাথ পার্টির শাসনের অবসান ঘটে। এরপর জানুয়ারিতে শারার নেতৃত্বে একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠিত হয়। গত জুলাইয়ে রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন এবং আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে পুনরায় সিরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করার অনুমতি দেয়।