দেশে প্রথমবার চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে পাইপলাইনে জেট ফুয়েল সরবরাহ

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাইপলাইনের মাধ্যমে জেট ফুয়েল সরবরাহ কার্যক্রম চালু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

৫.৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিএএফ জহুরুল হক ঘাঁটিতে জ্বালানি পৌঁছানো হবে। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে, পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় কর্মদক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সচিব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ করা প্রথম বিমানবন্দর এটি। প্রকল্পটি বিমানে আধুনিক, পরিবেশ বান্ধব ও দক্ষ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

পদ্মা অয়েল সূত্র জানায়, শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ২.৫ লাখ লিটার জেট ফুয়েল সরবরাহ করা হয়, যা হজ মৌসুমে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ লিটারে। আগে ট্যাংকার ট্রাকের মাধ্যমে ১৫-২০ বার যাতায়াত করে এসব জ্বালানি সরবরাহ করতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগত। নতুন পাইপলাইনের মাধ্যমে একই পরিমাণ জ্বালানি মাত্র ৯০ মিনিটেই সরবরাহ সম্ভব হবে এবং বছরে অন্তত আড়াই কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের আধুনিক মনিটরিং সিস্টেমযুক্ত পাইপলাইন বসানো হয়েছে, যা ঘণ্টায় ১৪০ কিউবিক মিটার জেট ফুয়েল পরিবহনে সক্ষম। প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা।

এর আগে চলতি মাসের ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ৩.৫ লাখ লিটার জ্বালানি সফলভাবে সরবরাহ করা হয়। পাইপলাইন চালুর ফলে আগের মতো ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী নয়, এখন মাত্র একজন অপারেটর কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারবেন।

বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও একই ধরনের পাইপলাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করে প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বছরে ২০ হাজারেরও বেশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে, যেখানে কমপক্ষে ১৭ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। নতুন পাইপলাইন চালুর ফলে বিমান জ্বালানি সরবরাহ আরও নিরাপদ, দ্রুত ও কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।