ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করলেন ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবস্থার শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একটি বৈঠক বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তহবিল অনুমোদন না হলে দেশটিতে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার এবং হাউসের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিসের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার ট্রাম্প জানান, ডেমোক্র্যাটদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনার পর তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সরকারের কার্যক্রম সচল রাখতে তিনি ‘সংখ্যালঘু চরম বামপন্থী ডেমোক্র্যাটদের’ শর্ত মেনে আলোচনায় বসবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের দাবিকে ‘অসার ও হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তাদের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক ফলপ্রসূ হতে পারে না।’

এরপর তিনি ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগের তালিকা তুলে ধরে বলেন, তারা সরকারি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। ট্রাম্পের দাবি, ডেমোক্র্যাটরা অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে অতিরিক্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি নতুন তহবিল চায়, অপরাধীদের জন্য দেশের সীমানা উন্মুক্ত করতে চায় এবং সবার জন্য লিঙ্গ রূপান্তর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে চায়। তিনি আরও যোগ করেন, ‘কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা মনে হচ্ছে পুরোপুরি পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।’

‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ট্রাম্প’, দাবি ডেমোক্র্যাটদের

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস বর্তমানে তহবিল নিয়ে এক জটিলতার মধ্যে রয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষে সরকারের বর্তমান তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি কার্যক্রম সচল রাখতে একটি স্বল্পমেয়াদী বিল পাস করলেও সিনেট সেই প্রস্তাব এবং ডেমোক্র্যাটদের একটি পৃথক প্রচেষ্টা উভয়ই প্রত্যাখ্যান করেছে।

১০০ সদস্যের সিনেটে কোনো বিল পাস করতে প্রক্রিয়াগত বাধা পেরোতে ৬০টি ভোটের প্রয়োজন হয়। রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫৭-৪৩) থাকলেও শুধু দলীয় ভোটে বিলটি পাস করা সম্ভব নয়।

ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ‘কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা শুধু চরম বামপন্থী নীতি বাস্তবায়ন করতে চায়, যার জন্য কেউ ভোট দেয়নি…এবং যা আমেরিকাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।’

অন্যদিকে, হাকিম জেফ্রিস বৈঠক বাতিলের জন্য ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি পোস্ট করেন, ‘ট্রাম্প সবসময় কাপুরুষের মতো পালিয়ে যান। ডোনাল্ড ট্রাম্প এইমাত্র ওভাল অফিসে আমার এবং নেতা শুমারের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাতিল করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, চরমপন্থীরা সরকার বন্ধ করে দিতে চায়, কারণ তারা আমেরিকাকে ধ্বংসকারী রিপাবলিকান স্বাস্থ্যসেবা সংকট মোকাবিলা করতে নারাজ।

চাক শুমারও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে বলেন, তিনি এবং তার দল ‘আমেরিকাকে জিম্মি করে রেখেছে। এই অচলাবস্থার দায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই নিতে হবে।’

এক বিবৃতিতে শুমার বলেন, ‘ট্রাম্প আলোচনার টেবিলে আসার আগেই পালিয়ে যাচ্ছেন। যখন আমেরিকানরা ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি এবং রিপাবলিকান স্বাস্থ্যসেবা সংকটের মুখোমুখি, তখন ট্রাম্প তার কাজ করার পরিবর্তে বাজে ব্যবহার করছেন।’