ক্রেমলিন: বিশ্বকে চড়া দামে তেল-গ্যাস কিনতে বাধ্য করছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ীর মতো আচরণ করছেন এবং গোটা বিশ্বকে চড়া দামে যুক্তরাষ্ট্রের তেল ও তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) কিনতে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছে ক্রেমলিন। বুধবার রুশ গণমাধ্যম আরবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই মন্তব্য করেন।

পেসকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য কখনো গোপন করেননি। পুরো বিশ্বকে চড়া দামে আমেরিকার তেল ও এলএনজি কিনতে বাধ্য করাই সবচেয়ে সহজ উপায়।’ তিনি যুক্তি দেখান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য জটিল কূটনৈতিক কৌশলের পরিবর্তে সরাসরি অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছেন।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টায় অনেকাংশেই সফল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা হয়তো ইউরোপীয়দের বাড়তি দামে জ্বালানি সম্পদ কিনতে রাজি করাতে পারবে। অনেকাংশে তারা সফলও হয়েছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ এখন চড়া মূল্যে এলএনজি কিনছে। এটি তাদের বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে এবং ফলস্বরূপ করদাতাদের ওপর বোঝা চাপিয়েছে।’

এই পরিস্থিতির কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে সুস্পষ্ট অস্বস্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে পেসকভ জার্মানির উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘জার্মান এবং বাভারিয়ার নাগরিকেরা যখন দ্বিগুণ মূল্যের বিদ্যুৎ বিল পেতে শুরু করল, তখন তারা অস্বস্তিতে পড়েছে এবং বিষয়টি তারা পছন্দ করছে না।’

পেসকভ আরও যোগ করেন, ‘এই বিষয়টি শুধু জার্মানির ক্ষেত্রেই নয়, প্রায় সব ইউরোপীয় দেশের জন্যই প্রযোজ্য। তবে ফ্রান্সের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে, কারণ তাদের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ পারমাণবিক উৎস থেকে উৎপাদিত হয়। কিন্তু বাকি সব দেশ তেল ও গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।’

বাজারের এই পরিবর্তনের জবাবে রাশিয়া তার জ্বালানি প্রবাহ সফলভাবে বিকল্প বাজারে সরিয়ে নিয়েছে বলে জানান পেসকভ। তিনি বলেন, ‘আমরা চীনের সঙ্গে একটি নজিরবিহীন চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, যা আগামী বহু বছরের জন্য নির্ধারিত। এটি কেবল আমাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির জন্য ভালো রপ্তানির সম্ভাবনাই নিশ্চিত করে না, বরং রাশিয়ার সীমান্তবর্তী সব অঞ্চলের উন্নয়নে একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি হিসেবেও কাজ করে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপ রাশিয়ার জ্বালানির জন্য আর আকর্ষণীয় বাজার থাকছে না। পেসকভ সংক্ষেপে বলেন, ‘পূর্বের দেশগুলো এখন আকর্ষণীয় বাজার হয়ে উঠছে এবং কে জানে, হয়তো খুব শিগগিরই অন্য কোনো অঞ্চলও সামনে চলে আসবে। এই প্রক্রিয়াটি অনিবার্য।’

সাক্ষাৎকারে খেলাধুলার প্রসঙ্গ এলে পেসকভ জানান, রুশ ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আচরণ অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, আমরা আইওসির অবস্থানের সঙ্গে একমত নই। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রতি রাজনৈতিক পক্ষপাত ও দ্বিমুখী নীতি রয়েই গেছে।’

তবে এই মতবিরোধ সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ হতে পারে না বলে তিনি যোগ করেন। পেসকভ বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে আমরা মুখ ফিরিয়ে নেব এবং যোগাযোগ পুরোপুরি ছিন্ন করব।’ তিনি উপসংহারে বলেন, নিরপেক্ষ পতাকার অধীনে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ক্রীড়াবিদদের নিজেদেরই নেওয়া উচিত।