ইসরায়েলি কারাগারে গাজার চিকিৎসকের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ

ইসরায়েলি কারাগারে আটক গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার স্বাস্থ্যের ‘গুরুতর অবনতি’ নিয়ে সতর্কতা জানিয়েছে একটি ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থাটি জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আটক এই চিকিৎসকের ওজন প্রায় ২৫ কেজি কমে গেছে এবং তিনি কারাগারে উপযুক্ত চিকিৎসা ও মানবিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

‘ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস’ নামের সংস্থাটি জানায়, তাদের একজন আইনজীবী সম্প্রতি অধিকৃত পশ্চিম তীরের ওফার কারাগারে ডা. আবু সাফিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। আইনজীবীর তথ্যমতে, খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত হলেও ডা. সাফিয়া যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। গত মার্চের পর থেকে তাকে কোনো বিচারকের সামনে হাজির করা হয়নি, এমনকি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কেও তাকে কিছু জানানো হয়নি।

সংস্থাটি আরও জানায়, হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও ডা. আবু সাফিয়াকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। কারাগারে তিনি সহিংসতা, দুর্ব্যবহার, খাদ্যাভাব, অপরিষ্কার পোশাক এবং কারারক্ষীদের বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মানবাধিকার সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজার শতাধিক চিকিৎসা কর্মীকে আটক করেছে, যাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি। সংস্থাটি এই কর্মকাণ্ডকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে।

সংস্থাটির বন্দিবিষয়ক বিভাগের প্রধান নাজি আব্বাস, ডা. আবু সাফিয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এই আটককে একটি ‘নৈতিক ও আইনি অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন।

এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে ডা. আবু সাফিয়াকে হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়, যেখানে তাকে অত্যন্ত ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাকে ‘বেআইনি যোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মার্চ মাসের শেষে একটি ইসরায়েলি আদালত তার আটকাদেশ ছয় মাসের জন্য বাড়িয়েছে বলে হামাস পরিচালিত বন্দিবিষয়ক কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়।

যুদ্ধ চলাকালে ডা. আবু সাফিয়া ব্যক্তিগতভাবেও চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবর কামাল আদওয়ান হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে তার ছেলে ইব্রাহিম নিহত হন। এর এক মাস পর তিনি নিজেও হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও তিনি হাসপাতাল না ছেড়ে রোগীদের চিকিৎসা চালিয়ে যান।

অবশেষে, ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতালটিতে অভিযান চালায়। সে সময় তারা বন্দুকের মুখে তাকে জোর করে বের করে দেয় এবং হাসপাতালটি ধ্বংস করে ফেলে, যার ফলে এটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিরলস বোমাবর্ষণে উপত্যকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ ও নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।