দীর্ঘ বৈঠক শেষে পুতিন-লুকাশেঙ্কোর ৫ বছর মেয়াদি গ্যাস চুক্তি

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এক দীর্ঘ বৈঠক শেষে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি গ্যাস চুক্তিতে পৌঁছেছেন। এই বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, জ্বালানি সহযোগিতা এবং ইউক্রেনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে দুই নেতা সংবাদমাধ্যমের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন এবং এরপর প্রাতরাশসহ বিভিন্ন পর্বে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন। সর্বমোট পাঁচ ঘণ্টা ২২ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় স্থান পায়।

লুকাশেঙ্কো সাংবাদিকদের জানান, ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে তাদের মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ ও বিশদ’ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে ‘আলোচনার টেবিলে বেশ কিছু ভালো প্রস্তাব’ রয়েছে। লুকাশেঙ্কো আরও উল্লেখ করেন যে, আলাস্কা শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেও এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে পর্যালোচনার জন্য সেগুলো ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়।

জ্বালানি প্রসঙ্গে লুকাশেঙ্কো নিশ্চিত করেন যে, বেলারুশ ও রাশিয়া স্বল্পমেয়াদি বার্ষিক চুক্তির পরিবর্তে পাঁচ বছর মেয়াদে তেল ও গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তেল নিয়ে একমত হয়েছি এবং এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া রয়েছে, কোনো সমস্যা নেই। গ্যাস নিয়েও আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি। আমি মনে করি, এই আলোচনার পর আমরা বিষয়গুলো চূড়ান্ত করব। এটি কার্যত পাঁচ বছরের জন্য।’

বেলারুশের নেতা আরও জানান, বেলারুশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়ন থেকে সাশ্রয় হওয়া অর্থে দেশটি আরও একটি বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করেছি। প্রথম ঋণের সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়ে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ বিদ্যুৎ ইউনিট তৈরি করতে পারি।’ তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র বা ইউনিট নির্মাণের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। লুকাশেঙ্কো যোগ করেন, ‘যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাশিয়া এবং মুক্তাঞ্চলগুলোতে প্রয়োজন অনুসারে আমরা অবিলম্বে একটি নতুন বিদ্যুৎ ইউনিট বা স্টেশন নির্মাণ শুরু করব।’

অন্যদিকে, পুতিন জোর দিয়ে বলেন যে এ ধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন কোনো বাধা হবে না। তিনি বলেন, ‘যদি এমন কোনো গ্রাহক থাকে যে বিদ্যুৎ নেবে এবং নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করবে, তবে এটি কোনো সমস্যাই নয়।’ রাশিয়ার নেতা বেলারুশকে পারমাণবিক জ্বালানি ক্ষেত্রে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে প্রশংসা করেন এবং জানান যে দেশটির বিশেষজ্ঞরা এখন বিদেশে রোসাটমের বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন।

উভয় নেতাই পারমাণবিক শক্তির দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈদ্যুতিক পরিবহন, আবাসিক এলাকার জন্য বৈদ্যুতিক উষ্ণায়ন ব্যবস্থা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সেন্টারের মতো নতুন খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন। পুতিন বেলারুশকে একটি নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং সব খাতে সহযোগিতা সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিস্থিতি খুবই ভালো।’ পুতিন ইউনিয়ন স্টেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করার কথাও তুলে ধরেন।