১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন শুল্ক

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) আগামী ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে বাড়তি শুল্ক আদায় শুরু করবে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

সিপিএ জানায়, নতুন এ শুল্ক কাঠামোর আওতায় বন্দরের বিভিন্ন খাতে ব্যবহার খরচ সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। ৫২টি সেবা খাতের মধ্যে ২৩টিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

প্রথমে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর করার কথা থাকলেও ব্যবসায়ী ও শিপিং এজেন্টদের তীব্র আপত্তির কারণে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এক মাসের জন্য তা স্থগিত করেছিলেন। পরে আলোচনার পরও মূলত সিপিএর প্রস্তাব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কনটেইনার পরিবহনে। ২০ ফুট কনটেইনারের পরিবহন খরচ ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা যা গড়ে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি।

এদিকে আমদানি কনটেইনারে খরচ বাড়ছে ৫,৭২০ টাকা, রপ্তানি কনটেইনারে বাড়ছে ৩,০৪৫ টাকা এছাড়া প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামা ফি বেড়েছে প্রায় ৩,০০০ টাকা।

আবার কনটেইনারভিত্তিক পণ্য খরচ কেজিপ্রতি ১.২৮ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৭৫ টাকা। ফলে সামগ্রিকভাবে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও পরিবহন খরচ ২৫–৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।

যদি কোনো জাহাজ নির্ধারিত সময়ে ভিড়তে না পারে, তবে অপেক্ষা খরচও বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। যেমন- ১২ ঘণ্টা অতিরিক্ত অপেক্ষায় বাড়তি ১০০% চার্জ, ২৪ ঘণ্টায় ৩০০%, ৩৬ ঘণ্টায় ৪০০% আর ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে সর্বোচ্চ ৯০০% অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এছাড়া, পাইলটেজ চার্জ সর্বোচ্চ ৮০০ ডলার এবং টাগবোট সহায়তা চার্জ প্রতি জাহাজে সর্বোচ্চ ৬,৮৩০ ডলার ধরা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ৪০ বছর পর বড় ধরনের শুল্ক সমন্বয় করতে যাচ্ছে। ১৭টি আন্তর্জাতিক বন্দর, যার মধ্যে ১০টি এশিয়ার পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ কাজে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে স্পেনের প্রতিষ্ঠান ইডম।

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। দেশের ৯২% আমদানি-রপ্তানি এবং ৯৮% কনটেইনার পরিবহন এ বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

২০২৪ সালে বন্দরটি ৩.২৭ মিলিয়ন টিইইউ (২০ ফুট কনটেইনার) হ্যান্ডল করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি। প্রতিবছর গড়ে ১৩ কোটি টন কার্গো এবং ৪,০০০ এর বেশি জাহাজ এখান দিয়ে চলাচল করে।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে শুল্ক বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, ১০–১৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়। তবে সিপিএর নতুন কাঠামো কার্যকর হলে গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি খরচ বহন করতে হবে। যেহেতু সব চার্জ ডলারে নির্ধারিত, টাকার অবমূল্যায়ন হলে খরচ আরও বেড়ে যাবে।