গাজাগামী ত্রাণবহরে হামলা: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি মালয়েশিয়ার

গাজাগামী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামক ত্রাণবহরে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এই ঘটনায় জড়িতদের, বিশেষ করে মালয়েশীয় নাগরিকদের বিষয়ে তেল আবিবকে জবাবদিহি করতে সম্ভাব্য সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি মালয়েশীয় ও আন্তর্জাতিক সব কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরও জানান, এটি একটি মানবিক অভিযান ছিল, যেখানে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকরা গাজার মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। আটক মালয়েশীয় নাগরিকদের মুক্ত করতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে তিনি যোগ করেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, এই মানবিক অভিযানে বাধা দিয়ে ইসরায়েল শুধু ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকারই লঙ্ঘন করেনি, বরং বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিবেককেও পদদলিত করেছে, যারা এখন আর ইসরায়েলের সঙ্গে নেই। তিনি আরও বলেন, এই নৌবহর শুধু একটি ত্রাণবহর নয়, এটি ঐক্য, সংহতি এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসার প্রতীক। এটি নিষ্ঠুর ও অমানবিক নিষেধাজ্ঞার অধীনে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হওয়া মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আশার আলো নিয়ে এসেছে।

আনোয়ার ইব্রাহিম জোর দিয়ে বলেন, মালয়েশীয় নাগরিকদের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং তাদের অধিকার ও মর্যাদা লঙ্ঘিত হলে আমরা চুপ থাকব না। তিনি যোগ করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও আকাঙ্ক্ষা অস্বীকার করা হবে, ততক্ষণ মালয়েশিয়া তার অবস্থানে অবিচল থাকবে এবং দীর্ঘস্থায়ী অবিচার ও বঞ্চনা বন্ধের দাবি থেকে পিছু হটবে না।

প্রায় ৪০টি দেশের ৫০০ জনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ৪০টির বেশি জাহাজের সমন্বয়ে গঠিত এই নৌবহরটিতে বুধবার ইসরায়েলি নৌবাহিনী হামলা চালায়। গাজা থেকে প্রায় ৮০ নটিক্যাল মাইল (১৪৮ কিলোমিটার) দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। নৌবহরের আয়োজকরা জানিয়েছেন, তাদের নয়টি জাহাজে হামলা চালানো হয় এবং একটিকে ধাক্কা দেওয়া হয়।

এই হামলার জবাবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নৌবহরের ‘কয়েকটি নৌকা’ আটক করা হয়েছে এবং যাত্রীদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় তার দাপ্তরিক এক্স অ্যাকাউন্টে এই নৌবহরটিকে ‘হামাস ফ্লোটিলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল প্রায় ১৮ বছর ধরে গাজাকে অবরোধ করে রেখেছে, যেখানে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাস। গত মার্চে সীমান্ত পারাপার বন্ধ করে এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ আটকে দিয়ে এই অবরোধ আরও কঠোর করে, যা অঞ্চলটিকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬৬,১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বারবার সতর্ক করেছে যে, অনাহার এবং রোগের দ্রুত বিস্তারের কারণে এই অঞ্চলটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।