গাজার ত্রাণবহরে ইসরায়েলি বাধা, লাতিন আমেরিকায় প্রতিবাদের ঝড়

গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে যাওয়া একটি জাহাজবহরকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী বাধা দেওয়ায় লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অবরোধ ভেঙে উপত্যকায় অতিপ্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়াই ছিল এই ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র মূল লক্ষ্য। বুধবার মেক্সিকো সিটি, বোগোতা, বুয়েনস আইরেস এবং মন্টেভিডিওসহ বিভিন্ন স্থানে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।

প্রায় ৪০টি দেশের ৫০০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ৪০টিরও বেশি জাহাজের এই বহরটি গাজা থেকে প্রায় ৮০ নটিক্যাল মাইল (১৪৮ কিলোমিটার) দূরে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বাধার মুখে পড়ে। বহরটির আয়োজকদের দাবি, তাদের নয়টি জাহাজ আটক করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যেই একটি জাহাজে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাহাজবহরের ‘বেশ কয়েকটি নৌকা’ কোনো অঘটন ছাড়াই আটক করা হয়েছে এবং যাত্রীদের একটি ইসরায়েলি বন্দরে স্থানান্তর করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় তাদের প্রাতিষ্ঠানিক এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এই বহরটিকে ‘হামাস ফ্লোটিলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় বিক্ষোভকারীরা দেশটির বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা ‘ন্যাশনাল বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন অব কলম্বিয়া’র (এএনডিআই) সামনে জড়ো হন। ‘গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা’ নামের একটি সংগঠন এক্স-এ সংস্থাটির সঙ্গে ‘কলম্বিয়ায় ইসরায়েলের অর্থনৈতিক মিশনের সরাসরি সম্পর্ক’ থাকার অভিযোগ তোলার পর এই স্থানটি বেছে নেওয়া হয়। যদিও পরে সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই হামলা’র নিন্দা জানান এবং গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি তোলেন। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা আজ এখানে আমাদের সহকর্মী এবং জাহাজবহরের মুক্তির দাবিতে এসেছি, এবং গাজায় যেন মানবিক সহায়তা ও খাবার পৌঁছানো নিশ্চিত হয়, সেজন্য এসেছি’।

উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আন্দোলনকারীরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দেন এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কারাবন্দি করার দাবি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

অন্যদিকে, মেক্সিকোর বিক্ষোভকারীরা মেক্সিকো সিটিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক সাত মেক্সিকান নাগরিকসহ আন্তর্জাতিক বহরের সব সদস্যের মুক্তির দাবি জানান। আটক হওয়া মেক্সিকান নাগরিকদের মধ্যে আরলিন মেদ্রানো এবং সল গঞ্জালেস নামের দুই নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তায় জাহাজবহরটি আটকে দেওয়ার খবর জানান। ভিডিওতে মেদ্রানো বলেন, ‘আপনি যদি এই ভিডিওটি দেখেন, তার মানে হলো ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় বেআইনিভাবে আমাদের পথরোধ করেছে’।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় মেক্সিকান প্রতিনিধি দলের আইনি প্রতিনিধি ডেভিড পেনা নিশ্চিত করেছেন যে, মেদ্রানো ও গঞ্জালেসসহ তাদের আরেকজন ক্রু সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটক করা সত্ত্বেও ইসরায়েল আটককৃতদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনার পরিকল্পনা করছে এবং আটক সবাইকে নির্বাসিত করা হবে।