ত্রাণবহরে হামলা ও গাজা বিভক্তি: বিশ্বকে সতর্ক করলেন আইরিশ প্রেসিডেন্ট

গাজামুখী ত্রাণবহর ‘গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলা’-তে ইসরায়েলি হামলা এবং গাজা শহরকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্তকারী দুটি প্রধান সড়ক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল হিগিন্স। বুধবার দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই ঘটনাগুলো ‘পুরো বিশ্বের জন্য সতর্কবার্তা’ হওয়া উচিত।

হিগিন্স এই অঞ্চলের শান্তির জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যখন ‘অসহায় মানুষের’ জন্য ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহরকে তার মানবিক উদ্দেশ্য পূরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তখন সেই প্রতিশ্রুতির অবস্থান কোথায়?

বুধবার গভীর রাতে ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজা থেকে ৮০ নটিক্যাল মাইলেরও (১৪৮ কিলোমিটার) কম দূরত্বে থাকা আন্তর্জাতিক এই ত্রাণবহরের ওপর হামলা চালায় এবং এতে থাকা কর্মীদের আটক করে। ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ব্রেকিং দ্য সিজ অন গাজা’ (আইসিবিএসজি) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কর্মীদের ওপর সহিংসতা চালানোর অভিযোগ এনেছে। সংস্থাটি জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী একটি জাহাজে ধাক্কা দিয়েছে, জলকামান ব্যবহার করেছে এবং জাহাজগুলোতে জোরপূর্বক উঠে বিশ্বের ৫০টি দেশের শান্তিপূর্ণ কর্মীদের সঙ্গে ‘নৃশংস আচরণ’ করেছে।

আইরিশ প্রেসিডেন্ট মাইকেল হিগিন্স বলেন, ত্রাণবহরের কর্মীদের নিরাপত্তা এখন ‘আমাদের সকলের এবং তারা যেসব দেশ থেকে এসেছেন, সেই সব দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়’। তিনি আরও বলেন, ‘একই সময়ে, উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা সেখানকার অসহায় বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে অবিরাম বোমা হামলা ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রায়ি বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ঘোষণা দেন যে, উত্তর গাজায় ‘নেটজারিম করিডোরের ওপর অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে’ দক্ষিণমুখী নেটজারিম অক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সেনাবাহিনী উপকূলীয় সড়ক আল-রশিদও বন্ধ করে দিয়েছে, যা ছিটমহলটির উত্তর ও দক্ষিণকে সংযুক্ত করেছে।

গাজা সরকার এই সড়ক বন্ধের পদক্ষেপকে ‘গণহত্যার নীতির অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে। হিগিন্স বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসকে গাজা শহরে কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য করার মতো ঘটনাগুলো পুরো বিশ্বকে শঙ্কিত করা উচিত।’ তীব্র সামরিক অভিযানের কারণে রেড ক্রস বুধবার জানায়, তারা গাজা শহরে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করে কর্মীদের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল প্রায় ১৮ বছর ধরে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বাসস্থান গাজাকে অবরোধ করে রেখেছে। গত মার্চে সীমান্ত পারাপার পথ বন্ধ করে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ আটকে দিলে এই অবরোধ আরও কঠোর হয়, যা পুরো অঞ্চলকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় ৬৬,১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বারবার সতর্ক করেছে যে, অনাহার ও রোগবালাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এই ছিটমহলটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।