নৌবহরে হামলা: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘দুর্বল’ ইউরোপ, বাড়ছে ক্ষোভ

গাজাগামী একটি ত্রাণবাহী নৌবহরে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বামপন্থী জোট। একই সঙ্গে গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ‘দুর্বল’ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছে তারা। বুধবার গভীর রাতে এই হামলার পর আটক সব কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে জোটটি।

এক বিবৃতিতে বামপন্থী জোটটি জানিয়েছে, নৌবহরের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের কাছে আটক কর্মীদের অবস্থান বা নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো নতুন তথ্য নেই। আটককৃতদের মধ্যে সংসদ সদস্য রিমা হাসান ও এমা ফোর‍্যুসহ বিভিন্ন দলের স্থানীয় ও জাতীয় প্রতিনিধিরা রয়েছেন। বিবৃতিতে গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘অবিলম্বে ও সরাসরি’ পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘এটি বিবেকবর্জিত যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে দায়মুক্তি দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর হামলা এবং প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের সমালোচনা করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নৌবহরের স্বেচ্ছাসেবকদের পদক্ষেপ উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং ইউরোপীয় কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা ও কাপুরুষতার সম্পূর্ণ বিপরীত।’ এতে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাধারণ নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব করতেই ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টের ২৩ মাস সময় লেগেছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো উল্লেখ ছিল না। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তার গণহত্যাকে অস্বীকার করার বিষয়টি ইতিহাসে লেখা থাকবে।’

বামপন্থী জোটটি ইসরায়েলের ওপর ব্যাপক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ, গণহত্যায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর, আইসিসিতে নেতানিয়াহুকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি সম্পূর্ণরূপে স্থগিত করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ফিলিস্তিনের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের চেয়ার লিন বয়লান বলেছেন, গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া কর্মীদের ‘অপহরণ’ করার এটি তৃতীয় ঘটনা। তার মতে, যেখানে বিশ্বনেতারা ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙতে ‘অত্যন্ত ভীরু’, সেখানে নৌবহরের কর্মীরা সেই কাজটি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘যখন বিশ্বনেতারা তথাকথিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে আলোচনা করছেন, তখন ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। ইইউকে অবশ্যই ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে এবং তাদের যুদ্ধাপরাধের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, অপহৃত সকলকে মুক্তি দেওয়া এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও ইইউ ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দায়িত্ব।’

উল্লেখ্য, মানবিক সহায়তা এবং চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে ত্রাণবাহী নৌবহরটি আগস্ট মাসের শেষে যাত্রা শুরু করে এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকালে গাজা উপকূলে পৌঁছানোর কথা ছিল। প্রায় ১৮ বছর ধরে ইসরায়েলি অবরোধের অধীনে থাকা ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির এই উপত্যকার দিকে এবারই প্রথম ৪৫টির বেশি দেশ থেকে ৫৩২ জন বেসামরিক সমর্থক নিয়ে প্রায় ৫০টি জাহাজ একসঙ্গে যাত্রা করে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ৬৬,১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণে উপত্যকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং সেখানে দুর্ভিক্ষ ও রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।