ফ্লোটিলা কর্মীদের অভিযোগ: ‘আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে’

গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলা থেকে ইসরায়েলের হাতে আটক ও বিতাড়িত হওয়া শতাধিক কর্মী অভিযোগ করেছেন যে, তাদের সঙ্গে ‘পশুর মতো আচরণ’ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তাদের শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। শনিবার তুরস্কের ইস্তানবুলে ফিরে তারা গণমাধ্যমের কাছে এই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গত মাসে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ যাত্রা শুরু করেছিল। তবে ইসরায়েলি বাহিনী সমুদ্রে জাহাজগুলো আটকে দিয়ে চার শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। গত শুক্রবার থেকে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।

শনিবার ১৩টি দেশের ১৩৭ জন কর্মী ইস্তানবুলে পৌঁছান, যাদের মধ্যে ৩৬ জন তুরস্কের নাগরিক। সেখানে তারা গণমাধ্যমের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর আচরণের বিষয়ে অভিযোগ করেন।

ফ্লোটিলায় থাকা ইতালির লোম্বার্ডির আঞ্চলিক কাউন্সিলর পাওলো রোমানো বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক সামরিক জাহাজ আমাদের পথ আটকায়। কিছু নৌকায় জলকামান দিয়ে হামলা করা হয়। ভারী অস্ত্রধারী সেনারা সব নৌকা জব্দ করে তীরে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করে। নড়াচড়া করলেই মারধর করত। তারা আমাদের উপহাস ও অপমান করেছে, যা ছিল এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন।’

তিনি জানান, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদের দিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেছিল যে, তারা অবৈধভাবে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছেন। রোমানো বলেন, ‘কিন্তু আমরা কখনো অবৈধভাবে ইসরায়েলে প্রবেশ করিনি। আমরা আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিলাম এবং সেখানে থাকার অধিকার আমাদের ছিল।’

তার অভিযোগ, কারাগারে তাদের বাইরে বেরোনোর অনুমতি ছিল না, এমনকি বোতলজাত পানিও দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘তারা রাতে দরজা খুলে বন্দুক হাতে চিৎকার করে আমাদের ভয় দেখাত। সার্বিকভাবে আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে।’

মালয়েশিয়ার ২৮ বছর বয়সী কর্মী আইলিয়া বালকিস বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে জাহাজ আটক হওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ। আমাদের হাত পেছন দিকে বেঁধে ফেলা হয়েছিল। আমরা ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলাম না, এমনকি আমাদের কয়েকজনকে মাটিতে মুখ নিচু করে শুয়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। তখন আমাদের পানি বা ওষুধ কিছুই দেওয়া হয়নি।’

পরে আটক কর্মীদের তুর্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ইস্তানবুলে পাঠানো হয়। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, ‘হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার আরও ১৩৭ জন উস্কানিদাতাকে আজ তুরস্কে নির্বাসিত করা হয়েছে।’

অন্যদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্লোটিলার ওপর ইসরায়েলের এই হস্তক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এই অধিকারকর্মীদের ‘মানবতার বিবেকের কণ্ঠস্বর’ আখ্যা দিয়ে তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

ইতালীয় সাংবাদিক লরেঞ্জো ডি অগাস্টিনো বলেন, ‘আমরা গাজার উপকূল থেকে ৮৮ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিলাম। সেখান থেকেই আমাদের অপহরণ করা হয়। এরপর দুই দিন আমরা এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে বন্দি ছিলাম।’

লিবীয় কর্মী মালিক কুতাইত জানিয়েছেন, তিনি ভীত নন এবং আবারও গাজায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আবার চেষ্টা করব। ওষুধ, ত্রাণ ও জাহাজ সংগ্রহ করে গাজায় পৌঁছানোর জন্য আবারও যাত্রা করব।’