বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আরও ক্ষমতা পাচ্ছে ব্রিটিশ পুলিশ

যুক্তরাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে বারবার অনুষ্ঠিত হওয়া বিক্ষোভের ওপর শর্ত আরোপের জন্য নতুন ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘ফিলিস্তিন অ্যাকশন’-এর সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেপ্তারের একদিন পর রবিবার দেশটির সরকার এই ঘোষণা দেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা এখন থেকে কোনো নতুন বিক্ষোভের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিক্ষোভগুলোর ‘সামগ্রিক প্রভাব’ বিবেচনা করতে পারবেন। এর আওতায়, কোনো স্থানে বারবার বিক্ষোভ হয়ে থাকলে আয়োজকদের অন্য কোথাও কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এই নতুন ক্ষমতা ‘যত দ্রুত সম্ভব’ কার্যকর করা হবে।

বর্তমানে, যুক্তরাজ্যে শুধু মারাত্মক জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের ঝুঁকি থাকলেই পুলিশ কোনো পদযাত্রা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে পারে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনে, কোনো স্থানে বারবার বিক্ষোভ হলে পুলিশ সেই কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন বা সময়সীমা কমিয়ে দেওয়ার মতো শর্ত আরোপ করতে পারবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যদি কোনো স্থানে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলে এবং এর ফলে বারবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তাহলে পুলিশ আয়োজকদের অন্য কোথাও কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা পাবে। কেউ এই শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, ‘প্রতিবাদের অধিকার আমাদের দেশের একটি মৌলিক স্বাধীনতা। তবে এই স্বাধীনতার সঙ্গে প্রতিবেশীদের নির্ভয়ে জীবনযাপনের অধিকারের একটি ভারসাম্য থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বড় আকারের এবং বারবার অনুষ্ঠিত হওয়া বিক্ষোভ আমাদের দেশের কিছু অংশকে, বিশেষ করে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে, নিরাপত্তাহীন ও আতঙ্কিত করে তোলে এবং তারা বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পায়। সাম্প্রতিক কঠিন দিনগুলোতে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ব্যাপক ভীতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে এটি বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো প্রতিবাদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশের প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

শাবানা মাহমুদ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জানান যে সম্প্রদায়গুলোকে শক্তিশালী করতে ও সমাজে মানুষের সঠিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সরকার কী পদক্ষেপ নিতে পারে, সে বিষয়ে চিন্তা করা তার দায়িত্ব।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুযায়ী, বিক্ষোভ সংক্রান্ত আইন পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হলো ‘ক্ষমতাগুলো পর্যাপ্ত কি না এবং সেগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না’ তা নিশ্চিত করা। এই পর্যালোচনার আওতায় বিক্ষোভ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

শনিবারের বিক্ষোভে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ সংগঠন ফিলিস্তিন অ্যাকশনকে সমর্থনের অভিযোগে আটক হয়েছেন। আয়োজক সংস্থা ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ জানিয়েছে, সংগঠনটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এবং গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে ট্রাফালগার স্কয়ারের আশপাশে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে প্রায় এক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণার পর সংস্থাটি সরকারকে ‘বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ’ করার এবং ‘কর্তৃত্ববাদ’ কায়েমের চেষ্টার জন্য অভিযুক্ত করেছে। উল্লেখ্য, গ্রীষ্মকালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার ‘ফিলিস্তিন অ্যাকশন’-কে নিষিদ্ধ করার পর থেকে সংগঠনটির সমর্থনে প্ল্যাকার্ড বহন করার মতো অভিযোগে শত শত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।