এলপিজির দাম কমাতে মাতারবাড়িই ভরসা!

মাতারবাড়ি টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নত করা গেলে দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরবরাহ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। এর ফলে বড় আকারের জাহাজ থেকে সরাসরি গ্যাস খালাস করা সম্ভব হবে, যা পরিবহন খরচ কমিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে দাম স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি: অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে সম্মানিত অতিথি হিসেবে তিনি বক্তব্য দেন।

জালাল আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন জ্বালানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কিন্তু দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে আসায় আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে, যা এলপিজি খাতের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশকে বছরে প্রায় ১.২ মিলিয়ন টন এলপিজি আমদানি করতে হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ এই চাহিদা বেড়ে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছাতে পারে। এই বিপুল চাহিদা মেটাতে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এলপিজি খাতে নতুন বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

বিইআরসি চেয়ারম্যান তার মাতারবাড়ি এলপিজি টার্মিনাল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বড় ও মাঝারি আকারের জাহাজের জন্য নোঙর ব্যবস্থা উন্নত করা গেলে খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এটি দীর্ঘমেয়াদে দেশের এলপিজি খাতকে আরও সাশ্রয়ী ও কার্যকর করে তুলবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিইআরসির কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি অপারেটরদের দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং নিরাপত্তা তদারকি বাড়ানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৩৩টি অপারেটরকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে এবং আরও ৫০টি ইনস্টলেশন লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন। ভবিষ্যতে খুচরা বিক্রেতাদেরও লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে।

এলপিজির মূল্য নির্ধারণের জটিলতা প্রসঙ্গে জালাল আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার—এ দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করায় দাম নির্ধারণ একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে ভোক্তার ওপর চাপ কমাতে ২০২১ সাল থেকে আরোপিত প্রশাসনিক খরচ (অ্যাডমিন কস্ট) বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী এবং এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিরুল হকসহ অন্যরা।