চট্টগ্রাম বন্দরে ৪১% শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারে সাত দিনের আল্টিমেটাম ব্যবসায়ীদের

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) আরোপিত ৪১ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি অবিলম্বে প্রত্যাহার না করা হলে সাত দিনের মধ্যে বন্দর কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়েছে ব্যবসায়ী নেতারা।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রামের নেভি কনভেনশন হলে পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ইতোমধ্যে ১৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কাছে বাড়তি চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে।
আমির হুমায়ুন চৌধুরী বলেন, আমাদের জানানো হয়েছিল, জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় তিনি ব্যস্ত ছিলেন। এখন যেহেতু তা শেষ হয়েছে, আমরা আশা করি তিনি আমাদের দাবি বিবেচনা করবেন।

তিনি আরও বলেন, ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর নতুন ট্যারিফ শুধু চট্টগ্রামের নয়, সারাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাধারণ ভোক্তাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এটা কেবল ব্যবসায়ীদের দাবি নয়, এটা সমগ্র জাতির দাবি, বলেন তিনি।

ফোরামের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, রবিবার (১৯ অক্টোবর) থেকে প্রতিদিন প্রতীকীভাবে চার ঘণ্টা করে কাস্টমস এজেন্ট কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করবেন।

সরকার যদি সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে, আমরা চট্টগ্রাম বন্দর সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেব বলে হুঁশিয়ারি দেন হুমায়ুন।

ফোরামের আরেক সংগঠক ও সিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন, কিছু হারে সমন্বয় যুক্তিযুক্ত হতে পারে, কিন্তু সেটা আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারিত হওয়া উচিত। একতরফাভাবে হারের বৃদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, ভারী যানবাহনের গেট পাস ফি ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। একজন ড্রাইভার কেন শুধু পণ্য নিতে প্রবেশের জন্য ফি দেবে? কোনো সভ্য দেশে এমন হয় না।

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বন্দরের ভেতরে চালক ও সহকারীদের জন্য টয়লেট, বিশ্রামকক্ষ বা ক্যানটিন নেই, অথচ বাড়তি ফি দিতে হচ্ছে।

এটা অন্যায় ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা ইতোমধ্যেই প্রাইম মুভার চলাচল বন্ধ রেখেছি, বলেন তিনি।

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে দুই উপদেষ্টা বন্দর চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এক মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন।

৫০টিরও বেশি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি এ সমাবেশে সংহতি জানান এবং শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।

সভাটি সঞ্চালনা করেন সিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব। এছাড়া বক্তব্য দেন শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি পারভেজ আখতার, কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম, গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ প্রযোজক সমিতির সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন চৌধুরী, পোর্ট ট্রাক মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহাগ ও মোটর পার্টস আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিনসহ অনেকে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) একই দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, অপারেশন চালু রাখা, ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটানো এবং আন্তর্জাতিক মানে টিকে থাকতে এ সমন্বয় অপরিহার্য। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৮৬ সালের পর থেকে বন্দর সেবার ট্যারিফ অপরিবর্তিত ছিল।

গত চার দশকে অপারেশনাল খরচ, অবকাঠামোগত চাহিদা ও মুদ্রাস্ফীতি কয়েকগুণ বেড়েছে, অথচ সেবা চার্জ অপরিবর্তিত ছিল, বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

সিপিএ জানায়, নতুন ট্যারিফ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কলম্বো বন্দরগুলোর সঙ্গে তুলনা করে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে জাহাজ টার্নঅ্যারাউন্ড সময় হ্রাস, ডিজিটাল সেবা ও পণ্য হ্যান্ডলিং উন্নয়নের কাজও চলবে।