সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহের মৃত্যুর মামলা নতুন মোড় নিয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছর পর আদালত মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।

সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হকের আদালত সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে এই আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, আদালত রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আসামি রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ কর্তৃক দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন বিচারক।

তিনি বলেন, পূর্বে পুলিশ, তদন্ত কর্মকর্তা, পিবিআই ও একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটিতে গাফিলতি করেছেন। এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের যে ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল, তা নেওয়া হয়নি। আদালত সেই ব্যর্থতা চিহ্নিত করে মামলাটি নতুনভাবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী আবীদ হাসান বলেন, সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর তিনি হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের আবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। অথচ আসামি রিজভী আহমেদ স্পষ্টভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল যে সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। তবু তদন্তে অবহেলা করা হয়েছে। আজ আদালত ন্যায়বিচারের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুমসহ অসংখ্য ভক্ত ও অনুসারী। তারা সালমান শাহর মৃত্যুর বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। রায়ের পর আলমগীর কুমকুম বলেন, আজ ২৯ বছর পর আমরা আশার আলো দেখলাম।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন।

১৯৯৭ সালে সিআইডি মামলার তদন্ত শেষে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন, এই মর্মে প্রতিবেদন জমা দেয়, যা আদালত গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করে।

তবে সালমানের পরিবার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা দায়ের করে। ২০০৩ সালে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠানো হয়; ২০১৪ সালে আবারও অপমৃত্যু বলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সালমানের মা নীলা চৌধুরী নারাজি আবেদন করেন এবং ২০২১ সালে পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, যা আদালত গ্রহণ করলেও আজকের আদেশে সেটি রদ করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় জন্ম নেন সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে তিনি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘দিন আমি রাত তুমি’সহ অসংখ্য হিট ছবি উপহার দেন।