রাশিয়ার সঙ্গে ‘গোপন যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েছে ফিনল্যান্ড!

ফিনল্যান্ডে রাশিয়ার প্রশিক্ষিত গুপ্তচরেরা সক্রিয় রয়েছে এবং দেশটি মস্কোর সঙ্গে সংকর বা হাইব্রিড কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে একটি ‘গোপন যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) একজন সাবেক কর্মকর্তা। রবিবার হেলসিঙ্কিতে ফিনল্যান্ডের সরকারি গণমাধ্যম ‘ইলে’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন শন উইসওয়েসার।

শন উইসওয়েসার, যিনি কয়েক দশক ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তিনি বলেন, মস্কো পশ্চিমা গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করতে অভিবাসন, বেকারত্ব এবং প্রতিরক্ষার মতো বিভেদ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোকে ব্যবহার করে অবিশ্বাস উসকে দেয় এবং নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে।

তার মতে, রাশিয়া প্রচলিত সামরিক শক্তির পরিবর্তে সাইবার হামলা, অপপ্রচার এবং গোপন প্রভাব বিস্তারের মতো হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশলের ওপর নির্ভর করে এবং ফিনল্যান্ডকে এক্ষেত্রে একটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, ‘ফিনল্যান্ড বিষয়টি জানুক বা স্বীকার করুক বা না করুক, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আগে থেকেই আপনারা রাশিয়া এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি গোপন যুদ্ধে ছিলেন।’

উইসওয়েসার যুক্তি দেন, পুতিনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের হারানো ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তিনি বলেন, ‘পুতিন নিজেই বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ছিল বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়। তিনি কখনোই এটি মেনে নেননি এবং যেকোনো মূল্যে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চান।’

সাবেক এই সিআইএ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া ইউরোপ ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোতে ‘অবৈধ’ নামে পরিচিত উচ্চ প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মোতায়েন রেখেছে, যারা মিথ্যা পরিচয়ে বসবাস করছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, ফিনল্যান্ডেও সমাজের বিভিন্ন স্তরে রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তারা ন্যাটোর সব দেশেই আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি তাদের সঙ্গে একটি দাবার খেলার মতো এবং দুর্ভাগ্যবশত, রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তুলনায় ফিনল্যান্ড সংখ্যায় অনেক পিছিয়ে।’ উইসওয়েসার জানান, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি একাই প্রায় এক লক্ষ এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে, যা মস্কোকে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা দেয়।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাশিয়া সরাসরি সংঘাতের চেয়ে হাইব্রিড কৌশল বেশি পছন্দ করে। সাইবার হামলা, অপপ্রচার, ভুয়া তথ্য ছড়ানো এবং আর্থিক প্রভাবকে তারা প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের দীর্ঘ সীমান্ত চলমান নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে উল্লেখ করে তিনি যোগ করেন, ‘এর কিছু অংশ যতটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত, ততটা করা হয় না। এটি এমন একটি ঝুঁকি, যা কীভাবে কাজে লাগাতে হয় তা রাশিয়া জানে।’

উইসওয়েসার জোর দিয়ে বলেন, মস্কোর কৌশলগত ধৈর্যের সঙ্গে পশ্চিমা রাজনৈতিক চক্রের পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুতিন এবং তার যন্ত্র কয়েক দশক পরের পরিকল্পনা করেন। পশ্চিমে রাজনৈতিক চক্র মাত্র চার বছরের। রাশিয়ার সুবিধা হলো তারা অপেক্ষা করতে পারে।’

রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ফিনল্যান্ড কয়েক দশকের সামরিক নিরপেক্ষতার অবসান ঘটিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ন্যাটোতে যোগ দেয়। এরপর থেকে হেলসিঙ্কি তার পূর্ব সীমান্ত শক্তিশালী করার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা নজরদারির সক্ষমতা বাড়িয়েছে।