প্রধান উপদেষ্টাকে ৬ সংস্থার চিঠি: র‍্যাব বিলুপ্তি ও আ. লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর দেওয়া বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া এক চিঠিতে সংস্থাগুলো এই আহ্বান জানায়। রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, নিরাপত্তা খাত এখনো সংস্কার না হওয়ায় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জবাবদিহিতা ও সংস্কার উদ্যোগে পুরোপুরি সহযোগিতা না করায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

চিঠিতে জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের প্রশংসা করা হলেও মানবাধিকার সুরক্ষার পরিসর আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত গুরুতর নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গ্রহণযোগ্য তথ্য-প্রমাণের ঘাটতি থাকা মামলাগুলো পর্যালোচনা ও খারিজ করা উচিত, যার মধ্যে আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে র‍্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে সেনাবাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সম্পন্ন হয়, সেজন্য আইসিটিকে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো, সম্পদ ও স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সংস্থাগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্বকারী আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ ২০২৫, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মতো আইনগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, প্যারিস নীতির আলোকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) সংস্কার এবং এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর বিধিনিষেধমূলক নীতিমালা পর্যালোচনার কথাও বলা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এখনো প্রত্যাবাসনের জন্য নিরাপদ নয়। তাই শরণার্থীদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন থেকে বিরত থাকার এবং তাদের চলাচল, জীবিকা ও শিক্ষার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিঠি প্রদানকারী সংস্থাগুলো হলো— হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), সিভিকাস, ফোরটিফাই রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদও জানানো হয় চিঠিতে।