আপনি পড়ছেন

অভিবাসন নিয়ে করা এক বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, তার সমালোচনার লক্ষ্য ছিল কেবল সেইসব অবৈধ বিদেশি নাগরিক, যারা দেশের নিয়মকানুন মেনে চলে না; কর্মরত এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা অভিবাসীরা নন।

ফ্রিডরিখ মের্ৎস

লন্ডনে অনুষ্ঠিত পশ্চিম বলকান শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মের্ৎস জার্মানিতে অভিবাসীদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দেশের শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে অভিবাসনের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন। এর আগে তার করা এক মন্তব্যের জেরে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতেই তিনি এই নতুন ব্যাখ্যা দেন।

মের্ৎস বলেন, ‘অভিবাসী পটভূমির বহু মানুষ আমাদের শ্রমবাজারের এক অপরিহার্য অংশ। তারা জার্মানিতে কাজ করেন, বসবাস করেন। তারা নার্সিং হোম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত কর্মরত। তারা কোথা থেকে এসেছেন, তাদের গায়ের রং কী বা তারা জার্মানির প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নাকি চতুর্থ প্রজন্মের বাসিন্দা, তা নির্বিশেষে আমরা তাদের ছাড়া চলতে পারব না।’

কনজারভেটিভ এই নেতা ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হলো, যারা অবৈধভাবে জার্মানিতে থাকছেন এবং নিয়ম মানছেন না, তারাই ‘শহরের দৃশ্যপটে সমস্যা’ তৈরি করছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যা তৈরি করছে তারা, যাদের স্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেই, যারা কাজ করে না এবং আমাদের নিয়ম মেনে চলে না। তাদের অনেকেই আমাদের শহরের ভাবমূর্তি নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এ কারণেই জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের বহু মানুষ এখন জনসমক্ষে বের হতে ভয় পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি রেলস্টেশন, পাতাল রেল, নির্দিষ্ট কিছু পার্ক এবং কয়েকটি এলাকাকে প্রভাবিত করছে, যা আমাদের পুলিশের জন্যও বড় সমস্যা তৈরি করছে। আমাদের অবশ্যই এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’

বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত সপ্তাহে পটসড্যামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। সেখানে কট্টর-ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) উত্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে চ্যান্সেলর মের্ৎস বলেন, তার সরকার অতীতের অভিবাসন নীতির ভুলগুলো সংশোধন করছে এবং এক্ষেত্রে অগ্রগতিও হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তবে অবশ্যই, শহরের দৃশ্যপটে আমাদের এখনও এই সমস্যাটি রয়ে গেছে এবং একারণেই আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন বড় পরিসরে নির্বাসন কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।’

সোমবার সাংবাদিকরা এ বিষয়ে চাপ দিলে মের্ৎস তার অবস্থানে অনড় থাকেন এবং দাবি করেন যে অনিয়মিত অভিবাসীরা শহরের জন্য একটি সমস্যা। তার এই মন্তব্যের পরই ‘উই আর দ্য ডটারস’ বা ‘আমরাই সেই কন্যা’ নামে একটি আবেদনপত্র চালু হয়, যা মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। আবেদনটির উদ্যোক্তা সেসি লিওনার্ড বলেন, ‘আমরাই সেই কন্যা এবং আমরা আপনার বর্ণবাদ দ্বারা ব্যবহৃত হতে দেব না, মিস্টার মের্ৎস! আপনি আমাদের পক্ষ হয়ে কথা বলবেন না।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বার্লিনে মের্ৎসের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) সদর দপ্তরের বাইরে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ‘উই আর দ্য ডটারস’ স্লোগানের অধীনে সমাবেশ করেন। তারা চ্যান্সেলর মের্ৎসকে বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন, যা কট্টর-ডানপন্থি এএফডি দলের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।

এই সমালোচনার ঝড় শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলেও ছড়িয়ে পড়েছে। জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক রিসার্চের (ডিআইডব্লিউ) সভাপতি মার্সেল ফ্রাটজশার বলেন, মের্ৎসের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো ‘সামাজিক মেরুকরণকে তীব্রতর করছে’ এবং দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি করছে।

জার্মানির অন্যতম বৃহৎ প্রোটেস্ট্যান্ট দাতব্য সংস্থা ডিয়াকোনির সভাপতি রুডিগার শুখ জোর দিয়ে বলেন, অভিবাসীরা কয়েক দশক ধরে আমাদের শহরের দৃশ্যপটের একটি স্বাভাবিক অংশ। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদেরই অংশ: তাদের ব্যবসা, সংস্কৃতি, সহকর্মী হিসেবে, ফুটবল ক্লাবের সতীর্থ হিসেবে, প্রতিবেশী হিসেবে এবং আরও অনেক পরিচয়ে।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.