যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় ২ ফিলিস্তিনি ভাই নিহত

যুদ্ধবিরতি চুক্তি চলমান থাকলেও মধ্য গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে দুই ফিলিস্তিনি ভাই নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় দির আল-বালাহের পূর্বে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে চিকিৎসাসূত্র নিশ্চিত করেছে।

আনদোলুকে চিকিৎসাসূত্র জানায়, নিহত দুই ভাই হলেন সাঈদ ও মাসুদ আল-ঘাওয়াস। দির আল-বালাহ শহরের পূর্বে আল-কাসতাল টাওয়ারের কাছে একটি ইসরায়েলি গোলার আঘাতে তারা প্রাণ হারান।

স্থানীয় সূত্রগুলো আনদোলুকে জানিয়েছে, ওই দুই ভাই ইসরায়েলের নির্ধারিত করা ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করেছিলেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় উপস্থিতি এবং পশ্চিমাঞ্চলের ‘নিরাপদ অঞ্চলের’ মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে এই রেখা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, ভূমিতে এই রেখার কোনো সুস্পষ্ট চিহ্ন নেই। ফলে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বেসামরিক নাগরিকরা কোনো ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই সরাসরি হামলার শিকার হচ্ছেন।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার অভ্যন্তরে ‘হলুদ রেখা’র পূর্বে নতুন অবস্থানে আংশিকভাবে সরে এসেছে, যাকে ফিলিস্তিনিরা ‘সাময়িক প্রত্যাহার রেখা’ বলে অভিহিত করে। এই প্রত্যাহারের পরও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং চুক্তির পরবর্তী ধাপে আরও সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে।

এর আগে শুক্রবার ইসরায়েলের সরকারি গণমাধ্যম জানায়, দেশটির উগ্র-ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সরকারের এক আলোচনায় গাজার অভ্যন্তরে ‘হলুদ রেখা’র কাছাকাছি আসা শিশুসহ যেকোনো ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য জোর দিয়েছেন।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের পূর্ববর্তী এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে এবং কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রমকারী বা এর কাছাকাছি আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালায়।

এর আগেও ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করার অজুহাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গাজা মিডিয়া অফিসের ১৯ অক্টোবরের এক বিবৃতি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ৮০ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যাতে ৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত রবিবার সেনাবাহিনীর চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনায় ৪৪ জন নিহত হন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপটি গত ১০ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। প্রথম পর্যায়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া এই পরিকল্পনায় গাজা পুনর্গঠন এবং হামাসবিহীন একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ আছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের এই গণহত্যামূলক যুদ্ধে ৬৮,২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।