সিরাজগঞ্জ এইচআইভির ‘রেডজোন’, ৪ বছরে আক্রান্ত ২৫৫

সিরাজগঞ্জ জেলাকে এইচআইভির জন্য ‘রেডজোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলায় উদ্বেগজনক হারে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত প্রায় পাঁচ বছরে ২৫৫ জনের দেহে এইচআইভির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৬ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের সিংহভাগই ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী। মোট আক্রান্তের ৭৩ শতাংশ অর্থাৎ ১৮৭ জনই এই উপায়ে সংক্রমিত হয়েছেন। মূলত, নেশাজাতীয় ইনজেকশনের সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের এইচআইভি চিকিৎসা কেন্দ্রের (এআরটি) কর্মকর্তারা জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে আসা নিষিদ্ধ ইনজেকশন এই সংকটের অন্যতম কারণ।

সিরাজগঞ্জে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এইচআইভি পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ওই বছর মাত্র চারজন শনাক্ত হলেও ২০২১ সালে আটজন, ২০২২ সালে ৬৯ জন এবং ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ১৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জন শিক্ষার্থী এবং ৩৫ জন সাধারণ মানুষও রয়েছেন। এছাড়া চারজন যৌনকর্মীও এই তালিকায় আছেন।

সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে আক্রান্তদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকিকুন নাহার জানান, রোগীদের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের মনোবল বাড়াতে কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মূলত সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বেশি, তাই তাদের মধ্যে সংক্রমণের হারও আশঙ্কাজনক।

এইডস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত দুই বছরে প্রায় এক হাজার ৯০০ অ্যাম্পল নেশাজাতীয় ইনজেকশন জব্দ করা হয়েছে এবং এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ফারুক হোসেনও জানিয়েছেন, এইডস প্রতিরোধে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান আরও কঠোরভাবে পরিচালনা করা হবে।