মির্জা ফখরুল: নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ এখন আর নেই, নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের দিন দুটি ব্যালট থাকবে—একটি গণভোটের জন্য এবং অন্যটি জাতীয় সংসদের জন্য। এ বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু আজ সেই নির্বাচন বানচালের জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে, তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’

যারা নির্বাচন নিয়ে বিরোধিতা করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। এক সময় আপনারা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আজ জনগণ যে নির্বাচন চায়, তার বিরোধিতা করবেন না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘প্রতারণার’ অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা যে কমিশন তৈরি করেছেন, সেই কমিশন প্রায় এক বছর আট-নয় মাস ধরে ঐকমত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে আমরা একমত হয়েছিলাম। কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম।’

তিনি আরও জানান, গত ১৭ অক্টোবর বৃষ্টির মধ্যে সব রাজনৈতিক দল ঐক্যমতের নথিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কাছে তা উপস্থাপনের পর দেখা যায়, সেখানে অনেক পার্থক্য রয়েছে, বিশেষ করে বিএনপির দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ করা হয়নি। এ কারণে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায় অন্তর্বর্তী সরকারের।

বিএনপি সংস্কারের পক্ষে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা বলে বিএনপি সংস্কার চায় না, তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। বিএনপির জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে’। তিনি জানান, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। বিএনপির দেওয়া ১০ দফা, ২৭ দফা এবং ৩১ দফাও সংস্কারের জন্যই দেওয়া হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়েছি, একসঙ্গে কাজ করেছি, তাদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। আসুন, সবাই মিলে নির্বাচনের সুযোগকে কাজে লাগাই।’

অনুষ্ঠানে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও বক্তব্য দেন। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশের বর্তমান সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধারের সক্ষমতা ড. ইউনূসের নেই। বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ নির্বাচন।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত। তারা কেন নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়েছে, তার ব্যাখ্যা দেয়নি।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, বিদ্যমান সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকার দেশকে নতুন সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়লে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অল্প সময়ে গণভোট আয়োজন করতে পারবে না এবং জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে জানুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ দেন।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘দেশের ইতিহাসের দুর্ভাগ্য– স্বৈরাচারকে সরিয়ে আবার নিজেদের মধ্য থেকেই স্বৈরাচার জন্ম নেয়। বিএনপির দুর্বলতার কারণেই নির্বাচন নিয়ে আজ জটিলতা দেখা দিয়েছে।’

জেএসডির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম স্বপন।