আনু মুহাম্মদ: সরকারের ওপর তিন দলের প্রভাব, জামায়াতের কর্তৃত্ব বেশি

বর্তমান সরকারের ওপর তিনটি দলের প্রভাব রয়েছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কর্তৃত্ব ও আওয়াজ সবচেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি অভিযোগ করেন, সুফি-সাধক, মাজার, দরবার এবং ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলাকারী ‘মব সন্ত্রাসীদের’ সরকার ক্ষেত্রবিশেষে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে আয়োজিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যারা আক্রমণ করছে, তাদের কথা হচ্ছে তাদের মতো করে ধর্ম পালন করতে হবে, তাদের মতো করে চিন্তা করতে হবে, তাদের রাজনীতিকে গ্রহণ করতে হবে। এটাকে ফ্যাসিবাদ বলে। আওয়ামী লীগের সময়ে আমরা এটা দেখেছি এবং সেটারই আরেকটা ভয়ংকর চেহারা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, ‘যদি দেখতাম সরকার এগুলো থামানোর চেষ্টা করছে কিংবা এগুলোর বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠ যথেষ্ট জোরালো, তাহলে আমরা তাদের দায়ী করতাম না। কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর জোরালো না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা মব সন্ত্রাসকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিংবা যারা এগুলো করছে, তাদের প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

গত ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, সর্বস্তরের মানুষ বহু বছরের শোষণ ও অত্যাচারের ক্ষোভ থেকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। এই প্রক্রিয়ায় একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ছদ্মবেশী ও প্রতারক কিছু গোষ্ঠী এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে ধর্মীয়, লৈঙ্গিক ও জাতিগত পরিচয়ের কারণে মানুষ আরও বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।

অনুষ্ঠানে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘মুসলমানদের মধ্যে এখন সুফি-সাধক ও আধ্যাত্মিক ঘরানার মুসলমানরা প্রান্তিক। এখন ওহাবি, মওদুদিবাদীদের শাসন চলছে।’ তিনি উদাহরণ হিসেবে হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার ভাঙার চেষ্টা এবং চিন্তার ভিন্নতার কারণে কবর থেকে নুরাল পাগলার লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

সুফিবাদ গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মোবারক হোসেন মুরাদ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘৫ আগস্টের পরদিন ৬ আগস্ট থেকে মাজার ভাঙা, ৭ তারিখ থেকে দরবার লুট শুরু হলো। এ জন্য কি গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল? যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেছে, তাদের ধরো। যারা মানবতার কথা বলে, তাদের ওপর আক্রমণ কেন?’

দিনব্যাপী এই কনভেনশনে দেশের ৫৫টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন চা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের নেতা সবুজ তাঁতী, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের নেতা শ্রীকান্ত মাহাতো, হাজং জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি প্রণব হাজং, মুন্ডা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নীতি মুন্ডা এবং ওঁরাও সম্প্রদায়ের দিপংকর ওঁরাও। কনভেনশনের শেষ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ব সুফি সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য হাসান শাহ দীপু নুরী সুরেশ্বরী।