আইন উপদেষ্টা: পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ফোন পেয়েছিলাম

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বদলি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে ‘আমার লোক-তোমার লোক’ সংস্কৃতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দলীয় প্রভাব ছাড়া প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।

শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলোর কার্যালয়ে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

আসিফ নজরুল বলেন, গত ছয় মাসে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বদলির ঘটনায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা আমাকে ফোন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এক দল বলেছে, ওনাকে সরাতে। আরেক দল বলেছে, ওনাকে সরালেন কেন। বিএনপি-জামায়াতকে এই ‘আমার লোক, তোমার লোক’ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই ব্যাধি কেবল বড় দলের মধ্যেই নয়, ছোট ও উদীয়মান দলগুলোর মধ্যেও প্রবেশ করছে। আজ ছোট দলগুলো মুক্ত মনে হলেও, কাল বড় হলে তারাও এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে এ আশঙ্কা আমার মধ্যে আছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই এই সংস্কৃতি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে দাবি করেন আইন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যত খারাপ কাজ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে নির্যাতন, ভুয়া নির্বাচন, দলীয়করণ-সবকিছুই শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। বাকিরা শুধু সেটাকে কন্টিনিউ করেছে।

‘আমার লোক, তোমার লোক’ মানসিকতা কেবল রাজনীতিতেই নয়, নাগরিক সমাজেও রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পরও কোনো প্রতিবাদ হয়নি। নাগরিক সমাজের মধ্যেও দলীয় আনুগত্যের সংস্কৃতি প্রবল।

তিনি আরও বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে একটি ‘নির্মম, অত্যাচারী, পাশবিক, দানবীয় বাহিনীতে’ পরিণত করেছিলেন। এখন সময় এসেছে পুলিশ ও প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে প্রকৃত জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনার।