নভেম্বরের হঠাৎ বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থার’ রেশে জলমগ্ন রাজধানী

অক্টোবরের মাঝামাঝি মৌসুমী বায়ু বিদায় নেওয়ার পর দেশে তেমন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) থেকে ফের বৃষ্টি শুরু হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পেছনে কারণ হিসেবে আবহাওয়া অফিস বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থায়’ রূপ নেয় এবং ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হানার পর দুর্বল হয়ে গেলেও এর প্রভাবে বাংলাদেশে মেঘ ও বৃষ্টির ধারা থেকে গেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে কোনো সক্রিয় নিম্নচাপ নেই। তবে স্থানীয় বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কিছু মেঘ জমে আছে। সেখান থেকে সৃষ্ট স্থানীয় প্রবাহের কারণে ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি রবিবার সকাল পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে চলতে পারে। এরপর আকাশ পরিষ্কার থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ৫ নভেম্বরের দিকে আবারও কিছু এলাকায় বৃষ্টি দেখা দিতে পারে।

শনিবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় ঢাকায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এত স্বল্প সময়ে এই পরিমাণ বৃষ্টি ‘ভারী বর্ষণ’ হিসেবে গণ্য হয়।

অবিরাম বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো- মিরপুর, পল্লবী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, নিউমার্কেট, বনানী, গুলশান, নর্দা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা।

ইস্কাটনের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, দুপুরের পর থেকে একটানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। জরুরি কাজে বের হয়ে পুরো ভিজে ফিরতে হয়েছে। ড্রেনের পানি উপচে রাস্তা ভরে গেছে।

বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা শেখ নকীব বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কের পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে মোটরসাইকেলে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে যায়। পরে হাঁটু সমান পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছে।

গ্রিন রোডের ইমরান হোসেন বলেন, রাস্তায় হাঁটুপানি আর তীব্র যানজট। ৩০ মিনিট ধরে একই জায়গায় আটকে আছি। এই অবস্থায় নেমে হাঁটা সম্ভব নয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (১ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত) সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৬২ মিলিমিটার। এছাড়া সিরাজগঞ্জের তারাশে ১২০ মিমি, নওগাঁর বদলগাছীতে ৮৬ মিমি, বগুড়ায় ৭১ মিমি, নীলফামারীর ডিমলায় ৬২ মিমি, দিনাজপুরে ৪৬ মিমি এবং রংপুরে ২৭ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে মঙ্গলবার ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হানে এবং পরে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। শুরুতে বাংলাদেশের উপকূলে এর তেমন প্রভাব পড়েনি, কিন্তু দুই দিন পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মন্থা দুর্বল হয়ে গেলেও এর সৃষ্ট মেঘমালা এবং অবশিষ্ট বায়ুপ্রবাহ এখনো ভারতের উত্তর ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে সক্রিয়। সেই প্রভাবে বাংলাদেশেও বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে সতর্ক সংকেত নামাতে বলেছে।
আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।