আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনাল: ‘আপনি বেশি কথা বলেন, যা বিব্রতকর’

‘আপনি বেশি কথা বলেন। এমন এমন কথা বলেন যা আদালতের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রনিযুক্ত একজন আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে এভাবেই মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আসামিদের পক্ষে জেরা করার সময় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তোলায় আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে তিরস্কার করেন আদালত।

সোমবার বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ঘটনা ঘটে। এদিন মামলার তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে নিহত মো. নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নিহা জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে পলাতক চার আসামির পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন তাকে জেরা শুরু করেন। তিনি সাক্ষী নিহাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার স্বামীকে কে গুলি করেছিল, আপনি কি দেখেছেন?’।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আপত্তি জানিয়ে বলেন, একই প্রশ্ন এর আগের আইনজীবীও করেছেন। তখন আইনজীবী আমির হোসেন আদালতের কাছে তার জেরার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘লাভের হিসাব অনেক দীর্ঘ। এমন প্রশ্নের কারণে আমার আসামিদের লাভ হতেও পারে।'

এই পর্যায়ে আদালত আইনজীবী আমির হোসেনকে বলেন, ‘এতে আপনার লাভ কী হবে। তার স্বামী মারা গেছে এটাই অ্যাভিডেন্স।' ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, ‘তিনি (সাক্ষী নিহা) একজন ভুক্তভোগী। তার সাক্ষ্যে আপনার আসামিরা তো মুক্তি পেয়ে যাবে না। আমরা যদি ভুল করি তাহলে আপনাদের যাওয়ার সুযোগ আছে।' আদালতের মতে, এটি একটি শোনা সাক্ষী এবং নিহার স্বামী যে মারা গেছেন, সেজন্যই তার সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। এরপর আইনজীবী আদালতের সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে তার জেরা শেষ করেন।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই স্বামী হত্যার বর্ণনা দিতে এসে জড়িতদের বিচার দাবি করেন তাবাসসুম আক্তার নিহা। এদিন তার সঙ্গে তিন বছরের ছেলে আনাস বিন নাদিমও আদালতে উপস্থিত ছিল।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণ আমির হোসেনকে গুলি ও দুজনকে হত্যার অভিযোগে এই মামলাটি করা হয়। মামলায় একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি হলেন রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। আর ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পলাতক চার আসামি হলেন খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান এবং সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।

ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হিসেবে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান এবং সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।