গাজায় ১০ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা জাতিসংঘের, তবুও ‘মারাত্মক ঘাটতি’র সতর্কতা

গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে জাতিসংঘ প্রায় দশ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, প্রবেশাধিকার সীমিত হওয়ায় ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সেখানে এখনও ‘জীবন রক্ষার দৌড়’ চলছে। ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধ এবং উত্তর গাজায় সীমান্তপথ বন্ধ থাকায় ত্রাণ কার্যক্রম গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

ডব্লিউএফপির মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মুখপাত্র আবির এতেফা কায়রো থেকে জানিয়েছেন, ‘যুদ্ধবিরতির তিন সপ্তাহের মধ্যে আমরা গাজাজুড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছেছি। এটি গাজায় ক্ষুধা মোকাবিলার বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ। তবে আমাদের আরও প্রবেশাধিকার দরকার, আরও সীমান্তপথ খুলতে হবে এবং ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় সীমিত আকারে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করছে। তবে জাতিসংঘের মতে, এই সহায়তার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, তারা ১৬ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য প্যাকেট সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যার প্রতিটি প্যাকেটে একটি পরিবারের দশ দিনের খাবার রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ১৪৫টি বিতরণকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৪৪টি খোলা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, সংস্থাটি ১৭টি রুটির কারখানার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় সাত লাখ মানুষের জন্য রুটি সরবরাহ করছে।

সামান্য উন্নতি হলেও গাজার খাদ্য পরিস্থিতি যুদ্ধপূর্ব সময়ের তুলনায় অনেক খারাপ বলে জানান এতেফা। তিনি বলেন, পরিবারগুলো মূলত শস্য ও ডালজাতীয় খাবার খেয়ে টিকে আছে। মাংস, ডিম বা সবজির মতো খাবার পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব। ডব্লিউএফপির আরেক মুখপাত্র নূর হাম্মাদ সেখানকার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘খাদ্যের দাম এতটাই বেড়েছে যে, যুদ্ধের আগে যে দামে এক কেজি আপেল কেনা যেত, এখন সেই দামে মাত্র একটি আপেল কিনতে হচ্ছে।’

সংস্থাটি আরও জানায়, তারা এখন পর্যন্ত গাজার মোট খাদ্য চাহিদার মাত্র অর্ধেক সরবরাহ করতে পেরেছে। বর্তমানে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো শুধু কারেম আবু সালেম ও কিসসুফিম সীমান্তপথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারছে, যার ফলে উত্তর গাজায় সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

এতেফা বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের প্রবেশপথগুলো কেন বন্ধ রাখা হয়েছে, তার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। সেখানে চাহিদা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা এখন জীবন বাঁচানোর প্রতিযোগিতায় আছি।’

সাহায্য সংস্থাগুলো দাবি জানিয়েছে, প্রতিদিন উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে কমপক্ষে ১০০টি ট্রাক প্রবেশ করতে দিতে হবে। ডব্লিউএফপির কাছে বর্তমানে এক লাখ চল্লিশ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে, যা দিয়ে প্রায় ২১ লাখ মানুষকে দুই মাস খাওয়ানো সম্ভব। তবে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্য বিতরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রবেশাধিকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।