রাশিয়া-বেলারুশের ওপর নিষেধাজ্ঞায় ইইউকে সমর্থন বসনিয়ার

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা জানিয়েছে, তারা রাশিয়া ও বেলারুশের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞানীতিকে পুরোপুরি সমর্থন করে। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলমেদিন কোনাকোভিচ বলেছেন, বসনীয় সার্বদের প্রধান দল এসএনএসডির বাধায় এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। বুধবার সারায়েভোতে এক সম্মেলনের ফাঁকে তিনি এই মন্তব্য করেন।

কোনাকোভিচ বলেন, ‘দোদিককে বরখাস্ত করা হলেও আমাদের এই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে না।’ রিপাবলিকা স্রপস্কার বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি বাস্তবসম্মত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ১৯৯৫ সালের স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তার সরকার ‘স্রেব্রেনিৎসায় নিহতদের দেহাবশেষকে মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে দেবে না।’ আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ওই ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে বসনীয় সার্ব বাহিনী ৮ হাজারের বেশি বসনিয়াক পুরুষ ও কিশোরকে হত্যা করেছিল।

বসনিয়ার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষককে অমান্য করার দায়ে রিপাবলিকা স্রপস্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং এসএনএসডি দলের প্রধান মিলোরাদ দোদিককে এ বছর এক বছরের কারাদণ্ড ও ছয় বছরের জন্য সরকারি পদে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের পর দেশটির রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়। এর সমান্তরালে, রিপাবলিকা স্রপস্কার পরিষদ তাদের ভূখণ্ডে জাতীয় পুলিশ ও বিচার বিভাগীয় সংস্থার কর্তৃত্ব কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তবে বসনিয়ার শীর্ষ আদালত পর্যালোচনার জন্য সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আইনগুলো স্থগিত করেছে। ইইউ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, বসনিয়ার সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে ফেলার যেকোনো প্রচেষ্টা ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং সেখানে ইইউর শান্তিরক্ষী বাহিনীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

যুদ্ধোত্তর ডেটন চুক্তি অনুযায়ী বসনিয়ায় বসনিয়াক, ক্রোয়াট ও সার্বদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি রয়েছে এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সব পক্ষের ঐকমত্য প্রয়োজন। এসএনএসডি এই ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে রাশিয়ার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা আরোপে বাধা দিয়ে আসছে। যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে সারায়েভো সমর্থন দিয়েছিল।

বসনিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বসনীয় সার্ব এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যেই তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ও ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। রিপাবলিকা স্রপস্কার নেতারা, বিশেষ করে দোদিক, দীর্ঘদিন ধরে মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ক্রেমলিন বরাবরই দোদিককে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে, ইইউ ও মার্কিন কর্মকর্তারা দোদিকের বিরুদ্ধে ডেটন চুক্তি লঙ্ঘন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী বক্তব্য উসকে দেওয়ার অভিযোগ করে আসছেন। এ প্রসঙ্গে কোনাকোভিচ বলেন, ‘দোদিক গত এক বছরে সাতবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন, যা থেকে বোঝা যায় তার আনুগত্য কোন দিকে।’

উল্লেখ্য, সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড ইইউর প্রার্থী দেশ হলেও জ্বালানি নির্ভরতা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।