একই নারী ১১ সন্তানের মা! জন্মসনদ কেলেঙ্কারিতে পদ হারালেন চেয়ারম্যান

জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিবন্ধনে গুরুতর জালিয়াতি এবং অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এক তদন্তে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা স্বাক্ষর করেন উপসচিব মো. নুরে আলম। দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজিজুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড অবৈধভাবে অন্যের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি আইনবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়েছেন এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য ব্যবহৃত বিডিআরআইএস (BDRIS) সিস্টেমের নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছেন। তার এই কার্যকলাপকে জনস্বার্থের পরিপন্থী এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে একই ব্যক্তিকে একাধিকবার বাবা বা মা হিসেবে দেখিয়ে ২০টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রুমি বেগম নামে এক নারীকে ১১টি সনদে ‘মা’ এবং রবিউল হাসান নামে এক ব্যক্তিকে ৯টি সনদে ‘পিতা’ হিসেবে দেখানো হয়। চলতি বছরের ৩১ মে রুমি বেগম-বাদশা মিয়া দম্পতিকে অভিভাবক দেখিয়ে ৭টি এবং রুমি বেগম–বজলু মিয়া দম্পতিকে দেখিয়ে ৪টি সনদ ইস্যু করা হয়। এর আগে ১৪ মে রবিউল হাসানকে পিতা দেখিয়ে আরও ৯টি সনদ দেওয়া হয়, যা তদন্তে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।

এর আগেও জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। গত ১৩ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম তার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রমের ক্ষমতা স্থগিত করেন। একইসঙ্গে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আকন্দের নিবন্ধন সহকারী হিসেবে দায়িত্বও বাতিল করা হয়েছিল।

চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে শুধু জন্মসনদ জালিয়াতিই নয়, ভাতা বিতরণ, উন্নয়ন প্রকল্প এবং পুনর্বাসন কর্মসূচিতেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল লতিফ তার বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন, যদিও সেটির তদন্ত এখনও শুরু হয়নি। স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, দামোদরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক পদে থেকে তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করেছেন।

উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে জাহাঙ্গীর আলম ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তখন অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তিনি বরখাস্ত হয়েছিলেন এবং পরে সেই অর্থ ফেরত দেন। অভিযোগ ও বরখাস্তের বিষয়ে তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।