জোটের চাপ নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ঢাকার ৭ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারছে না কেন বিএনপি?

আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৭টিতে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। জোটের শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এই আসনগুলোতে প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭টি আসনে নিজেদের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করলেও ঢাকার এই আসনগুলো এখনো ফাঁকা রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোকে বিএনপি বেশ কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার নীতি নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী) আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। একইভাবে, ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর-আদাবর) আসনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে সমর্থন দিচ্ছে দলটি। পার্থ এবং ববি হাজ্জাজ দুজনেই নিজ নিজ এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন।

এদিকে, ঢাকা-৭ (লালবাগ-চকবাজার) আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হককে প্রার্থী করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। যদিও মামুনুল হকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সম্মতি পাওয়া যায়নি এবং তার দল বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে ভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে।তবুও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা যায়।

জোটের বাইরে দলীয় কোন্দল ও একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় কয়েকটি আসনে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিএনপি। ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসনে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে এই আসনের প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে তার বিরোধিতা করে স্থানীয় তিন নেতা—মোস্তাফিজুর রহমান (সেগুন), এম কফিল উদ্দিন এবং মোস্তফা জামান একজোট হয়েছেন। তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন, যিনি সম্প্রতি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।

ঢাকা-৯ (সবুজবাগ-খিলগাঁও) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস মনোনয়ন চান। কিন্তু ‘এক পরিবার থেকে এক প্রার্থী’ নীতির কারণে তার মনোনয়ন পাওয়া অনিশ্চিত। মির্জা আব্বাসকে ঢাকা-৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এই আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তাসনিম জারাকেও প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি-নিউমার্কেট) আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সহায়ক কমিটির সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলমের মধ্যে প্রার্থিতা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। এই আসনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াও ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন, যা নতুন সমীকরণের জন্ম দিয়েছে। এছাড়া ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে তমিজ উদ্দিন এবং ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদের নাম আলোচনায় এগিয়ে আছে।

প্রার্থী ঘোষণা করা আসনগুলোতেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ঢাকা-১২ আসনে সাইফুল আলম নীরবের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আনোয়ারুজ্জামানের অনুসারীরা বিক্ষোভ করেছেন। একইভাবে ঢাকা-১৫ আসনে শফিকুল ইসলাম মিলটনের প্রার্থিতা নিয়েও দলের শীর্ষ পর্যায়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

এসব বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, যেসব আসনে এখনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি, সেখানে শিগগিরই নাম ঘোষণা করা হবে। এছাড়া যেসব আসনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেখানে পরিবর্তনের সম্ভাবনাও রয়েছে।