শেখ হাসিনার মামলার রায় সোমবার, রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে সোমবার (১৭ নভেম্বর)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল বেলা ১১টায় এই রায় ঘোষণা করবেন। রায়কে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা এড়াতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

রবিবার থেকেই ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চার জেলায় মোট ১৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করছে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা জানিয়েছেন, শুধু ফরিদপুরেই চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে এবং ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সমন্বয়ে একটি কঠোর বলয় তৈরি করা হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, সরকারি স্থাপনা, কূটনৈতিক এলাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা বিশেষভাবে জোরদার করা হয়েছে। রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম জানান, ট্রাইব্যুনালের চারপাশে অতিরিক্ত চেকপোস্ট, আর্চওয়ে ও পুলিশি ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের সাঁজোয়া যানও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হবে।

এই রায়কে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ দুই দিনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এরপর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেড়েছে, যা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ডিএমপির তথ্যমতে, গত দুই দিনে ৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং ১ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রবিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ছাত্রশক্তি রাজধানীতে একটি মশাল মিছিল বের করে। শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘খুনি হাসিনার বিচার চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়। মিছিল শেষে এক সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি জাহিদ আহসান বলেন, ‘আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি জুলাইয়ের ১ হাজার ৫০০ শহীদের পরিবারের পক্ষে। আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাই না, তবে আশা করি বিচার বিভাগ গত ১৬ বছরের সব ঘটনা স্মরণ করে রায় দেবেন’।

মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন এবং গত ১৩ নভেম্বর তিনি ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম জানিয়েছেন, রায়ে শেখ হাসিনার সাজা হলে তার বিরুদ্ধে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’ বা দণ্ডাদেশের পরোয়ানা জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হবে। এর আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর প্রসিকিউশন রেড নোটিশের জন্য আবেদন করলেও ইন্টারপোল তাতে সাড়া দেয়নি।