আরপিও: এক সংশোধনীতে ত্রিমুখী চাপে বিএনপি জোট

আসন্ন নির্বাচনে জোটবদ্ধ অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) একটি সংশোধনী বিএনপিকে বড় ধরনের কৌশলগত সংকটে ফেলেছে। নতুন বিধান অনুযায়ী, জোটের শরিক দলগুলোকে এখন নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, যা বিএনপির মিত্র ছোট দলগুলোর জয়ের সম্ভাবনাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি মনে করছে, তাদের দীর্ঘদিনের পরিচিত ‘ধানের শীষ’ প্রতীক ছাড়া শরিকদের বিজয় নিশ্চিত করা কঠিন হবে এবং এর রাজনৈতিক সুবিধা প্রতিপক্ষ পেতে পারে।

এই আইনি পরিবর্তনের কারণে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের বেশ কয়েকটি শরিক দলের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছে, এই সংশোধনীটি গণতান্ত্রিক অধিকারকে সংকুচিত করেছে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘এই সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের পরিসর ছোট করা হয়েছে। আমরা চাই সংশোধনী পরিবর্তন হোক।’ তার মতে, জোটের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হবে।

একই ধরনের মত প্রকাশ করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো দলগুলোও। দলটির মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী মনে করেন, জোটের কোনো দলের অধিক পরিচিত প্রতীকে নির্বাচন করার অধিকার থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘আরপিওর এই সংশোধনী সেই অধিকার খর্বের শামিল। আমরা আগের বিধানটাই বহাল চাই।’ জানা গেছে, বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত দল ইতোমধ্যে আরপিওর ২০(১) ধারার এই সংশোধনী বাতিলের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে।

বিএনপি এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা ভাবছে এবং শরিক দলগুলোকেও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘একটি দল কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে, সেটি তার গণতান্ত্রিক অধিকার।’ তিনি আরও জানান, বিএনপি চায় ছোট দলের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতারাও সংসদে আসুন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করুন। তার মতে, আরপিওর এই সংশোধনীটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাহত করবে।

এদিকে, প্রতীক জটিলতার পাশাপাশি আসন বণ্টন নিয়েও শরিকদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। দলটি যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোর জন্য অন্তত ২৫টি আসন ছাড়ার কথা ভাবছে। তবে আসন সমঝোতার চেয়েও প্রতীক ব্যবহারের নতুন বিধানকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপির আশঙ্কা, ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলে ভোটের আগেই আসন হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি, কোনো আসনে মিত্র দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে কেউ বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়ালে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

উল্লেখ্য, অতীতে এই প্রতীক ব্যবহারের বিধান নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মতবিরোধ ছিল। বিএনপি জোটের শরিকদের জন্য অভিন্ন প্রতীক ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও জামায়াত নিজ প্রতীকে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের জারি করা অধ্যাদেশে জামায়াতের চাওয়াটিই প্রতিফলিত হয়েছে, যা এখন বিএনপির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।