ইতিহাসের পাতায় কুরাসাও: বিশ্বকাপে সবচেয়ে ছোট দেশ

ফুটবল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিলো মাত্র দেড় লাখ জনসংখ্যার একটি দেশ, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়। ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র কুরাসাও এই অসামান্য কীর্তি গড়ে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। এই অর্জনের মাধ্যমে তারা বিশ্বকাপে খেলা সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশের গৌরব অর্জন করল।

এর আগে সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ডটি ছিল আইসল্যান্ডের দখলে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া আইসল্যান্ডের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৯৮ হাজার। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮৭ জন অধিবাসীর দেশ কুরাসাও সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কিংস্টনের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে জ্যামাইকার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করার মাধ্যমে তারা এই ঐতিহাসিক যোগ্যতা অর্জন করে।

জ্যামাইকার বিপক্ষে ম্যাচটি অবশ্য সহজ ছিল না কুরাসাওয়ের জন্য। দ্বিতীয়ার্ধে জ্যামাইকার পক্ষে একটি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়া হলেও ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্যে তা বাতিল হয়ে যায়। ভাগ্যও সহায় ছিল না জ্যামাইকার। বিরতির পর তিনবার কুরাসাওয়ের পোস্টে বল লাগিয়েও গোল করতে পারেনি তারা। এই ব্যর্থতার পর জ্যামাইকার কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্টিভ ম্যাক্লারেন। অন্যদিকে, অপরাজিত থেকে ১২ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে কুরাসাও।

এই সাফল্যের নেপথ্যে থাকা কোচ ডিক অ্যাডভোকাটও গড়তে যাচ্ছেন এক অনন্য রেকর্ড। ৭৮ বছর বয়সী এই ডাচ কোচ পারিবারিক কারণে জ্যামাইকার বিপক্ষে ম্যাচে ডাগআউটে উপস্থিত থাকতে পারেননি। নেদারল্যান্ডসে বসে রাত ২টায় তিনি খেলা দেখেন এবং ফোন ও ম্যানেজারের মাধ্যমে দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। ২০২৬ বিশ্বকাপে ডাগআউটে দাঁড়ালে তিনি হবেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী কোচ, ভেঙে দেবেন অটো রেহাগেলের রেকর্ড।

কনকাকাফ অঞ্চল থেকে শুধু কুরাসাও নয়, আরও দুটি দেশ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। দীর্ঘ ৫২ বছর পর বিশ্বকাপে ফিরছে হাইতি। তারা নিকারাগুয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করে। এছাড়া এল সালভাদরকে ৩-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে পানামা। স্বাগতিক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো সরাসরি খেলায় এই তিনটি আসন ফাঁকা ছিল।

কুরাসাওয়ের ফুটবল দলের একটি মজার তথ্য হলো, দলের সব খেলোয়াড়ের জন্ম নেদারল্যান্ডসে এবং তারা অ্যান্টিলিয়ান বংশোদ্ভূত। এক দশক আগেও ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৫০তম অবস্থানে থাকা দলটি এখন ৮২তম স্থানে উঠে এসেছে, যা তাদের ধারাবাহিক উন্নতির প্রমাণ।

কুরাসাও, পানামা ও হাইতি সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করলেও কনক্যাকাফ অঞ্চল থেকে আরও দলের বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফের মাধ্যমে আরও দুটি দল উঠে আসবে। প্লে-অফে লড়বে জ্যামাইকা, সুরিনাম, বলিভিয়া, ডিআর কঙ্গো, ইরাক এবং নিউ ক্যালেডোনিয়া। এই ম্যাচগুলো আগামী মার্চে উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত হবে।