আলোচনার প্রস্তাব দিয়েও সাড়া পায়নি লেবানন, ভূখণ্ড ছাড়তে নারাজ ইসরায়েল

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম অভিযোগ করেছেন, তাদের ভূখণ্ড থেকে দখলদারিত্ব অবসানের জন্য ইসরায়েল আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী সালাম জানান, প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন পাঁচটি সীমান্ত চৌকি থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার একই প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছি।’ তবে লেবাননের এই প্রস্তাবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সালাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে হতবাক করেছে। তারা আলোচনার কথা বলে, আবার আমরা যখন প্রস্তুতি দেখাই, তখন তারা বৈঠকে রাজি হয় না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই বিষয়টি আমি আমেরিকানদের কাছে তুলে ধরব।’

সরকারের সব অস্ত্র রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা এবং দক্ষিণাঞ্চলকে সামরিকীকরণমুক্ত করার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সালাম নিশ্চিত করেন যে প্রক্রিয়াটি ‘সঠিক পথে এগোচ্ছে’। তিনি জানান, ইসরায়েল সংলগ্ন দক্ষিণ সীমান্তে সেনাবাহিনী তাদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন আরও দ্রুত এগোতে পারছি না? প্রথমত, আমাদের সেনাবাহিনীতে আরও লোক নিয়োগ করতে হবে, সেনাবাহিনীকে আরও ভালোভাবে সজ্জিত করতে হবে এবং তাদের বেতন বাড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট লেবানন সরকার মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাকের খসড়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর অস্ত্রসহ সব অস্ত্রশস্ত্র ২০২৫ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হবে এবং সেনাবাহিনী এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, লেবাননের সেনাবাহিনী সিরিয়া সীমান্ত বরাবর চোরাচালানের পথগুলোতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। এছাড়া লেবাননের পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য ফ্রান্স ও সৌদি আরবকে নিয়ে একটি দাতা সম্মেলনের কাজ চলছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, লেবাননের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউনিফিল) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘ব্লু লাইন’ (জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত ইসরায়েল ও লেবানন বিভক্তকারী সীমান্তরেখা) অতিক্রম করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৭,৫০০টিরও বেশি আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং প্রায় ২,৫০০টি স্থলসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া ৩৬০টির বেশি অস্ত্র লেবাননের সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং সব লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুরোদমে আগ্রাসনে রূপ নেওয়া ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে ৪,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১৭,০০০ জন আহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ঘোষিত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে, এই বছরের জানুয়ারিতে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু তারা আংশিক সেনা প্রত্যাহার করে এখনো পাঁচটি সীমান্ত চৌকিতে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে।