প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক দরপতন, টালমাটাল বিশ্ব শেয়ারবাজার

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঘটেছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা কমে যাওয়ায় এবং সম্পদের অতিমূল্যায়নের উদ্বেগে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক বিক্রির চাপ তৈরি হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মনোভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শুক্রবার বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে এই দরপতন দেখা যায়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থার অবসানের পর বাজারের নজর এখন অর্থনৈতিক সূচকগুলোর দিকে। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি খাতের বাইরে নতুন ১ লাখ ১৯ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, যা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। তবে বেকারত্বের হার ৪.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, ১৫ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে বেকারত্ব ভাতার আবেদন ৮ হাজার কমে ২ লাখ ২০ হাজারে নেমে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্মসংস্থানের এই শক্তিশালী পরিসংখ্যান শ্রমবাজার শীতল হওয়ার উদ্বেগ কমিয়েছে। আগামী ৯-১০ ডিসেম্বর ফেডারেল রিজার্ভের ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির বৈঠকের আগে এটিই ছিল সর্বশেষ কর্মসংস্থান প্রতিবেদন।

সিএমই ফেডওয়াচ অনুসারে, শুক্রবার ডিসেম্বরে সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা ৩৫.৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ৬৩.৮ শতাংশ ছিল।

ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের মন্তব্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের সদস্য লিসা কুক বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে উচ্চস্তর থেকে সম্পদের মূল্যে একটি বড় ধরনের সংশোধন দেখলে আমি অবাক হব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমার ধারণা, সম্পদের মূল্যে বড় ধরনের দরপতনের আশঙ্কা বেড়েছে।’

লিসা কুকের এই মন্তব্যের পর প্রযুক্তি এবং সেমিকন্ডাক্টর খাতের শেয়ারের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দরপতন শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দেশটির অস্থিরতা সূচক (ভিক্স) প্রায় ১২ শতাংশ বেড়ে ২৬.৪ পয়েন্টে পৌঁছায়। ডাও জোন্স ০.৮৪ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ১.৫৬ শতাংশ এবং নাসডাক ২.১৫ শতাংশ হ্রাস পায়। বন্ড মার্কেটে, ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড টানা পঞ্চম দিনের মতো কমে ৪.১০ শতাংশে নেমে আসে।

বৃহস্পতিবার এনভিডিয়ার প্রত্যাশার চেয়ে ভালো আয়ের খবরে ইউরোপের শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শুক্রবার মার্কিন বাজারের পতনের প্রভাবে তা নেতিবাচক হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ০.২১ শতাংশ, ইতালির এফটিএসই এমআইবি ০.৬২ শতাংশ, ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ০.৩৪ শতাংশ এবং জার্মানির ড্যাক্স ৪০ সূচক ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের পতনের প্রভাব এশিয়ার পুঁজিবাজারেও পড়েছে। জাপানে অ্যাডভানটেস্টের শেয়ার প্রায় ১২ শতাংশ, ফুরুকাওয়া ইলেকট্রিকের ১১ শতাংশ, টোকিও ইলেকট্রনের ৭ শতাংশ এবং লেজারটেকের ৫ শতাংশ দরপতন হয়। এনভিডিয়ার সম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব বিক্রি করার খবর নিশ্চিত করার পর সফটব্যাংকের শেয়ারের দর ১০ শতাংশের বেশি কমে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় এসকে হাইনিক্সের শেয়ার ৮ শতাংশের বেশি এবং স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ৬ শতাংশ কমেছে। দিন শেষে জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২.২ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি ৩.৭ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাং সেং ১.৬ শতাংশ এবং চীনের সাংহাই কম্পোজিট ১.৪ শতাংশ কমেছে।